সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ফসল নষ্ট করে গত ১০ মাস ধরে চলছে টাওয়ার নির্মাণের কাজ। আর জমি ও ফসলের ক্ষতিপূরণ চাওয়ায় টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জমির মালিকের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দান, চাঁদাবাজি মামলাসহ হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত রবিবার সকালে লিখিতভাবে সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগটি করেছেন ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের মালিথাপাড়া এলাকার মৃত বাবুল মালিথার ছেলে রঞ্জুল ইসলাম।
লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইনের কাজের একাংশের টাওয়ার নির্মাণের কাজ করছেন ঢাকার স্কাইল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার লি. নামে একটি বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। লাগানো সবুজ ধান ক্ষেতের কয়েক শতাংশ জায়গায় টাওয়ারের পিলার ঢালাইয়ের সিমেন্ট মিশ্রিত পানি ও কাদায় তলিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটি ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের আড়কান্দি এলাকায় থাকা রঞ্জুল ইসলামের ৫ বিঘা জমি থেকে ৮ শতাংশ জমিতে বিগত ১০ মাস আগে বৈদ্যুতিক টাওয়ার নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেই সময় রঞ্জুল, লুৎফর ও রবিসহ কয়েকজনের জমিতে থাকা সরিষা, ভুট্টা, শিম ও ধান নষ্ট করে। টাওয়ার নির্মাণে সরকারি আইন অনুসারে জমির মালিক ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ নোটিশের মাধ্যমে অবগত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ চাইতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্কাইল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার লি. কর্তৃক কৃষকদের পুলিশি হয়রানিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রঞ্জুল ইসলামের জমির বর্গাচাষী স্থানীয় মিন্টু জানান, ৯-১০ মাস আগে টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি কিছু না জানিয়ে মাঠে থাকা সরিষা, ভুট্টা, ধান, শিম ও ঢেঁড়শ জমিতে ইট, বালু, পাথর ও লোহার রড ফেলেন। ফসলের জমি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু করে। এতে প্রায় দুই বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়।
মুলাডুলি ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার তারা মালিথা জানান, ফসল নষ্ট করে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু করায় কৃষকরা বাধা সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। তখন থানায় বসে কৃষকদের ফসলের জন্য কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দেয়।
মেম্বার তারা মালিথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েসের বরাত দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে কৃষক ও জমির মালিকদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তখন ইউএনও জানিয়েছিলেন টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটিকে ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আর জমির মালিকরা জমির কাগজ দেখিয়ে কাজ চলমান সময়ে ফসল উৎপাদনে বাধাজনিত কারণে ও টাওয়ারের পোলের খুটির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্কাইল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক জাকির হোসেন রিগেন জানান, কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ করা হয়েছে। জমির মালিক রঞ্জুল ইসলামকে হুমকি দেওয়া হয়নি। তার যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে দুইপক্ষ বসে সমাধান করা হবে।
টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্কাইল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। যদি জমির মালিক রঞ্জুল ইসলামের কোনো দাবি থাকে তাহলে টাওয়ারে তার টানানোর সময় সমাধান করা হবে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার জানান, টাওয়ার নির্মাণ কাজ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। তবে জমির মালিক রঞ্জুল ইসলাম বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ থানায় দায়ের করা হয়নি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, টাওয়ার নির্মাণের কাজটি সরকারি কাজ। তবে ফসল নষ্ট করায় টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটিকে অবশ্যই কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।