রবিবার , ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

নতুন মুখের আশায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে ইচ্ছুক হাবিব-সিরাজ!

প্রতিবেদক
আমাদের ঈশ্বরদী রিপোর্ট :
জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম সরদার। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা নাসির উদ্দিনকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি’র গ্রুপিং রাজনীতির কারণে এই আসনটি বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী বারবার ধরাশায়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর কাছে। এই আসন থেকে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নতুন মুখের আশায় রয়েছেন। আর এ আসন থেকে বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক নতুন ও পুরনো মুখ। তবে জোটগত সিদ্ধান্ত আর বিএনপি নির্বাচনমুখী হলে এই আসনে বিএনপির প্রভাবশালী দুই প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন এমনটি শোনা যাচ্ছে।

একই সঙ্গে পৃথকভাবে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদেরও নাম শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহলে একাধিকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু টানা ৫ বারের সংসদ সদস্য নির্বাচনের পেছনে মূলত দায়ী বিএনপির গ্রুপিং রাজনীতি।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ‘৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী তুখোড় ছাত্রনেতা ও ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব যোগ দেন বিএনপিতে। হাবিবের যোগদানের পর থেকে হাবিব-সিরাজ দুই গ্রম্নপে ভাগ হয়ে যায় বিএনপি। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সিরাজুল ইসলাম সরদার মনোনয়ন পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হন হাবিবুর রহমান হাবিব। সেই বার হাবিব-সিরাজের দ্বন্দ্বে জয়ী হন আওয়ামী লীগের শরীফ ডিলু।

২০০৮ সালেও দল থেকে মনোনয়ন পান সিরাজ। সেবার হাবিব মাঠে বিদ্রোহী না হলেও ভোটে বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়ায় সিরাজের বিরুদ্ধে। তাতেই বাজিমাত ডিলু’র। এভাবেই পরপর ৫ বার টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী মাঠে বেশ তৎপর রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার। অনুরূপভাবে মাঠ গরম করছেন পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব।

আসন্ন এ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ জোরেশোরেই প্রচার-প্রচারণা ও নানা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তৎপর রয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা। ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুর পর এই আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, ভূমিমন্ত্রীর পুত্র, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটি সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ কনক, বিশিষ্ট শিল্পপতি, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুল আলিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম লিটন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ, বিশিষ্ট শিল্পপতি জালাল উদ্দিন তুহিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু, সাবেক সংসদ সদস্য পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইসাহক আলী মালিথা ও সাবেক মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে এলাকায় ইতোমধ্যে মাঠ গরম করতে শুরু করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সরদার। একই দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় কর্মকান্ডে নিশ্চুপ ছিলেন সিরাজুল ইসলাম সরদার। ছিলেন নিজ এলাকার বাইরে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নেতা হওয়া, এলাকায় কম অবস্থান করা, দলীয় নানা কোন্দল ও দ্বন্দ্বের কারণে নেতাকর্মীদের কাছে কিছুটা ভাটা পড়েছে হাবিবুর রহমান হাবিবের অবস্থান। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ঘরানার এই দুই নেতা দলীয় নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা করছেন।

এদিকে, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা নাসির উদ্দিন। পরবর্তী ২০০১ ও ২০০৮ সালে জোটকে ছাড় দিয়ে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। জামায়াতের দাবি, জয়ী হওয়ার মতো ভোটব্যাংক থাকতেও জোটের স্বার্থে দুইবার আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপিকে। কিন্তু বিএনপির ঘরোয়া দ্বন্দ্বে মাসুল গুনতে হয়েছে জামায়াত ও জোটকে। পরপর ৫ বার বিএনপি জামায়াত জোট আসন হারালেও এবারে পুনরুদ্ধার করতে চায়।

সেই লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছে জামায়াত। মাঠ পর্যায় ভালো পরিচিতি ও জনপ্রিয় থাকায় এখানে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল প্রার্থী হতে চাইছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এ ছাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার আলী এই আসন থেকে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে জয় পেতে বিএনপির কোন্দল গ্রুপিং মেটানোর কোনো বিকল্প নেই। দ্বন্দ্ব শেষ করে একক প্রার্থী দিলে বিএনপি আসনটি আবার নিজেদের দখলে নিতে পারবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মী। তা না হলে বরাবরের মতো আসন হারাতে হবে বিএনপিকে।

আর নতুন মুখ নতুন নেতৃত্ব দেখতে চাইছেন এ আসনের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই এ আসনে সংসদ সদস্য হয়ে উন্নয়ন ও জনগণের সেবা করেছেন ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত। উপনির্বাচনে বিজয়ী হন বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুরজ্জামান বিশ্বাস।

আসন্ন নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মী নানা কারণেই নতুন মুখের দাবি জানাচ্ছেন। ঢাকা কেন্দ্রিক বেশকিছু মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও কিছু নেতা মাঠ পর্যায়ে দেখা-সাক্ষাৎ, খোঁজখবর রাখেন। বাকিরা শুধু নির্বাচন আসলেই মাঠে এসে মনোনয়ন দাবি করেন- এমন অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মীদের।

বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে উপনির্বাচনে নির্বাচিত করেছেন। আমি আমার জায়গা থেকে এবং সরকারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আসন্ন নির্বাচনে আমাকে আবারও যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, আর আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখব।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ভূমিমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফের (ডিলু) ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা সাকিবুর রহমান শরীফ (কনক) বলেন, ‘জননেত্রীর ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। আমার প্রয়াত বাবার দেখানো পথ অনুসরণ করেই করোনার সময় থেকে ১ লাখেরও বেশি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্য, শীতের সময়গুলোয় কম্বল, ঈদ, পূজা-পার্বণে শাড়ি-লুঙ্গি, নগদ অর্থ উপহার দিয়ে পাশে থেকেছি। এ ছাড়া করোনার কঠিন সময় জননেত্রী শেখ হাসিনার নামে ২০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার, পিপিই, স্যানিটাইজার, ডাক্তার সেবা ও ওষুধ নিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষকে সেবা দিয়েছি। সামাজিক সব ধরনের কর্মকান্ডে নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সম্পৃক্ত রয়েছে। বাবা আমার রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু। তার সঙ্গে থেকেই রাজনৈতিক কর্মকান্ড তথা জনগণের ভিতরে কিভাবে পৌঁছাতে হয় সেটা শেখার চেষ্টা করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পদচারণা করেছি। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আটঘরিয়া-ঈশ্বরদীর আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন। এই আসনে বাবা থাকতে বিএনপি জামায়াত কখনো তাদের অবস্থান মজবুত করতে পারেনি। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’

দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনী এলাকায় মানুষের কল্যাণে, জনগণের সেবা আর সরকারের নানামুখী উন্নয়নের ছোঁয়া এ অঞ্চলে বাস্তবায়ন করতে সর্বদা চেষ্টা করবেন এমন অভিমত ব্যক্ত করলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজাউল রহিম লাল, প্রকৌশলী আব্দুল আলিম, শিল্পপতি জালাল উদ্দিন তুহিন, রফিকুল ইসলাম লিটন, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরুসহ অনেকেই। তাদের দাবি, নির্বাচন ঘিরে মানুষের পাশে থাকা নয়, সব সময় মানুষের পাশে থেকে সেবা করাই রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মতামত পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন বলে তার একাধিক বিশ্বস্তজনরা নিশ্চিত করেছেন।

আর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘হাবিব মূলত আওয়ামী লীগ থেকে আসা বিএনপির হাইব্রিড নেতা। সে বিএনপির রাজনীতিতে আসার পরই এ আসনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। বিএনপিতে এসেও সে মনোনয়ন না পেয়ে কুড়াল প্রতীকে বিএনপির বিরোধিতা করে নির্বাচন করে হেরেছেন। তার কারণে বারবার এ আসনে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। দেখা দিয়েছে দলের ভেতরে উপদলীয় কোন্দল। তিনি আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। আর দল আমাকে যদি মনোনয়ন দেয়। তাহলে এবার এ আসন আর বিএনপির হাত ছাড়া হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এদিকে সাধারণ মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী ও সচেতন মানুষের ভাবনা, এ আসনে পরিবর্তন আসা জরুরি। নতুন ও যোগ্য প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের দলীয় ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। নির্বাচন ঘিরে অতিথি পাখি নয়, এলাকায় থেকে দলীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থেকে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, দলীয়ভাবে তাদের মনোনীত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি এই অভিজ্ঞজনদের।

সূত্র : যায়যায় দিন ( ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ )

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

আপনার জন্য নির্বাচিত
error: Content is protected !!