শীতের শুরুতেই শহর বা গ্রামের অলিগলিতে জমে উঠেছে মৌসুমি পিঠার দোকান। সেখানে মেলে হরেক পদের পিঠা। এই পিঠা কারও বাড়তি আয়ের উৎস, কারও বা জীবিকার প্রধান মাধ্যম। পিঠা বিক্রি করেই এখন জীবন চলেপ পাবনার ঈশ্বরদীর শতাধিক পরিবারের।
করোনার মধ্যে কেউ হারিয়েছেন চাকরি, আবার কারও কারও পুঁজি ভেঙ্গে খেতে খেতে অন্যান্য ছোটখাটো ব্যবসা হয়েছে বন্ধ। উপায়ান্তর না পেয়ে অল্প পুঁজি জোগাড় করে নেমে পড়েছেন পিঠা বিক্রিতে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন মোড় ও পাড়া-মহল্লায় স্বল্প আয়ের লোকজন গড়ে তুলেছেন পিঠার দোকান। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে গেইট, পৌর সুপার মার্কেটের সামনে, পোস্ট অফিসের সামনে, কলেজ মোড়, বিভিন্ন এলাকায় এসব পিঠার দোকান বসেছে। নারী-পুরুষ মিলিয়ে এখন ঈশ্বরদীর আনাচে-কানাচে বিক্রি হচ্ছে পিঠা।
পৌষের শুরুতে শীতের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিদের বাহারি পিঠার আয়োজন চলে। গ্রামবাংলার চিরাচরিত ওই রীতি এখন আর হয়তো খুব একটা চোখে পড়ে না। ব্যস্ততম নাগরিক জীবনে এখন বাড়িতে পিঠা তৈরিতে অনেক ঝামেলা। তাই বিভিন্ন মোড়ে গড়ে উঠেছে শীতকালীন ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। এসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছে মানুষ। সন্ধ্যার পর বেড়ে যায় ক্রেতার সমাগম। রাত ১২টা অবধি চলছে বিক্রি। হিম-শীতল পরিবেশে গরম পিঠা খেতে পরিবার নিয়ে বাড়ির সবাই বেরিয়ে পড়েন।
বুধবার রাতে দেখা যায়, মাটির চুলা থেকে একের পর এক গরম গরম ভাপা পিঠা নামছে। ক্রেতারা কেউবা খাচ্ছেন আবার কেউ নিয়ে যাচ্ছেন। ভাপা পিঠার সঙ্গে কোনো চুলায় চিতই, কোনোটিতে ডিম বা অন্য পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে থাকছে হরেক রকম ভর্তা। রসুন-মরিচবাটা, ধনিয়াপাতা বাটা, শুঁটকি, কালোজিরা, সর্ষে ভর্তাসহ নানা রকম উপকরণ। তবে ভাপা আর চিতই পিঠার কদর বেশি। দাম প্রতিটির ৫ থেকে ১০ টাকায়। এছাড়া অভিজাত এলাকায় গড়ে ওঠা পিঠার দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পুলি, ভাপা, তেলের পিঠা, কালাই রুটি, পাটিসাপটাসহ হরেক রকম পিঠা।
রেলগেটে পিঠার দোকান ষাটোর্ধ্ব মাহেলা বেগমের। মাটির চুলার কয়েকটি জ্বালামুখ। তাতে তৈরি হচ্ছে চিতই, ভাপাসহ নানা পিঠা। এর পাশেই ছোট ছোট বাটিতে থরেথরে সাজানো শর্ষে, মরিচ, চেপা শুঁটকিসহ নানা স্বাদের ভর্তা। সেখানে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ খাচ্ছেন, কেউবা কাগজের ঠোঙায় মুড়িয়ে পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
পৌর মার্কেটের পিঠা বিক্রেতা করিমুল্লা বলেন, এ সময়টায় বেশি হয় পিঠা বিক্রি। চিতই, ভাপা, পাটি সাপটাসহ ৫-৭ রকমের পিঠা তৈরি করছি । চিতই ও ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য থাকছে নারকেল, খেজুরের গুড়সহ বাহারি পদের ভর্তা। লাভ হচ্ছে ভালোই ।
পিঠা খেতে আসা পঞ্চাশোর্ধ হারুনর রশীদ বলেন, আগে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার ছবি এখনও চোখে ভেসে উঠে। এখন নগর জীবনে সেসব ওঠে গেছে। শহরের বাড়িতে পিঠা বানানো ঝামেলা। এ ছাড়া সরঞ্জামও নেই। আর বানালেও দোকানের মতো হয় না। তাই ঝামেলা কমাতে দোকান থেকেই কিনে নিচ্ছি। এরা আছে বলেই পিঠা খাওয়ার সুযোগ হয়।
আরেক পিঠা বিক্রেতা মোসলেম উদ্দিন বলেন, সাভার ইপিজেডের চাকরি করোনার সময় চলে গেছে। এখন চালের গুঁড়া, ভর্তা আর প্লাস্টিকের পিরিচ সাজিয়ে দোকান খুলে বসে আছি।
পিঠা বিক্রেতা মন্নুজান বেগম জানান, করোনার মধ্যে পুঁজি ভেঙ্গে খেয়ে স্বামীর আগের ব্যবসা আর নেই। এখন দুজনে মিলে পিঠার দোকান করেছি। পিঠা বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়। প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা পিঠা বিক্রি করি। লাভও হয় ভালো।