ঋণ খেলাপির মামলায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারি গ্রামের ১২ কৃষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের কোনো অনিয়মের প্রমাণ খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। ফলে কৃষকরা ঋণের টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আহসানুল গণি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) ঋণ গ্রহীতা কৃষকদের দায়ী করে ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
মো. আহসানুল গণি বলেন, কৃষকরা নির্দোষ হলে তো মামলাই হতো না। উনারা সময় মতো টাকা পরিশোধ না করাতেই মামলা হয়েছিল এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধ করেও জেলে গেছেন- কৃষকদের এমন অভিযোগ সত্য নয়।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতি আছে কিনা সেটা জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোনো দোষ পাইনি। উনারা (কৃষকরা) বলছেন- তারা সমিতির সভাপতির কাছে টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু কোনো রশিদ দেখাতে পারেননি। হয়তো উনাদের সমিতির সভাপতি বা সেক্রেটারির গাফিলতি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত নয়।
মামলা পরবর্তী পদক্ষেপ কেমন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আহসানুল গনি বলেন, মামলা মামলার গতিতে চলবে। কৃষকরা অথবা অন্য কেউ যদি টাকা পরিশোধ করেন তাহলে মামলা প্রত্যাহার হবে, না হলে মামলা চলবে।
তিনি বলেন, ভাড়ইমারী উত্তরপারা সবজি চাষি সমবায় সমিতির ৪০ জন কৃষককে ২০১৬ সালে ১৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। একেকজন কৃষক ঋণ পান ৪০ হাজার টাকা। নির্ধারিত সময়ে ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় সমিতির ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
তবে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন অভিযুক্ত কৃষকরা। সমিতির সভানেত্রী বিলকিস আক্তার বলেন, আমরা ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১৩ লাখ টাকা শোধ করেছি। কিন্তু উনাদের (ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) কাছে নাকি আমাদের আরও ১৩ লাখ টাকা ঋণ আছে। এতো টাকা কীভাবে হয়। উনাদের কাছেই তো রশিদ থাকার কথা। কৃষকদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ কীভাবে তারা দাবি করেন?
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ৪০ জন কৃষক ওই সমিতির নামে দলগত ঋণ হিসেবে ১৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ পান। দীর্ঘদিনেও সেই ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত ২৫ নভেম্বর ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে গত ২৭ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক (সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-২ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক) মো. শামসুজ্জামান গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেন।
পরে কৃষকদের বিরুদ্ধে ঋণসংক্রান্ত মামলা ও ঋণের কিস্তি নিয়ে জটিলতার বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক। ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) মো. আহসানুল গণির নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প ও ঋণ) আবদুর রাজ্জাক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক (আইন) আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও ব্যাংকের পাবনা শাখার ব্যবস্থাপক কাজী জসিম উদ্দীন ও শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও মামলার বাদী সৈয়দ মোজাম্মেল হকও তদন্তে কাজ করেন।