‘এসো স্মৃতির প্রাঙ্গণে, মিলি প্রীতির বন্ধনে’ স্লোগান নিয়ে ঈশ্বরদীর পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উৎসবে নবীন-প্রবীণদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৪ জুন) পাকশী এনবিপিএম হাইস্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পর ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুল মাঠে বসেছিল যেন এক মিলনমেলা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন পৌষের শুরুতে সকাল থেকেই প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস হাইস্কুলে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত হতে থাকে স্কুলচত্বর।
১৯৭২ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে ঈশ্বরদী-খুলনা রেলপথের ধারে পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বিদ্যাপীঠের অনেক মেধাবী প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দেশের ও বিদেশের গণ্ডি পেরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। যারা আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল, যারা সততা ও ন্যায়ের পথে সমাজ ও দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেছে। সেই ঐহিত্যবাহী বিদ্যাপীঠ ৫০টি বছর অতিক্রম করছে।
কৈশোরকালীন স্মৃতিটাকে হাতড়াতে অনেকেই ছুটে এসেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। কৈশোরের সেই ছোট্ট বেলার বন্ধুত্ব, কারো কারো সঙ্গে কয়েক যুগ পরে দেখা। হঠাৎ প্রিয় সহপাঠীকে দেখে জড়িয়ে ধরে আবেগআগ্লুত হয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, কিরে কিরাম (কেমন) আছিস বলেই মোবাইলে সেলফি তুলে রাখতে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। হাসি ঠাট্টায় অনেকেই হাইস্কুলের মাঠে কৈশোরকালীন সেই প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে খুনসুটিতেও পুরোনো স্মৃতিচারণে মেতে উঠছেন। দুপুর শুরুর পর সব সতীর্থদের লাইনে সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে খাবার নিয়ে প্যান্ডেলে বসে খেতে দেখা যায়।
এর আগে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) পাকশী নর্থ পেপার মিলস হাইস্কুলের ৫০ বছর পূর্তিতে উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বর্ণাঢ্য র্যালি, ডিসপ্লে প্রদর্শন, আলোচনাসভা, সম্মাননা ক্রেস্ট বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাচে আর গানের পাশাপাশি ১৯৭৭ সাল থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ব্যাচ থেকে একজন করে শিক্ষার্থী স্মৃতিচারণ করেন।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ে দুইদিন ব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
এদিকে পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে বিদ্যালয়টি সেজেছিল বর্ণিল সাজে।
বিদ্যালয়ের সড়কে ঢুকতেই পরপর বিশাল দুটি তোরণ, বিদ্যালয়ের দেয়ালে আলোকসজ্জা, রাস্তার দুইপাশে রং-বেরঙের লাল, নীল, হলুদ রংঙের পতাকা, মাঠের চারিদিকে প্রাক্তন সতীর্থদের পরিবারের সদস্যদের বসবার জন্য প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আলাদা গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। বিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন ছিল।
আলোচনাসভায় পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, আমিন উল আহসান কামাল, বিশেষ অতিথির মধ্যে বক্তব্য দেন- ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পি এম ইমরুল কায়েস, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক আব্দুল হামিদ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবেদা সুলতানা রানী, মোস্তাফিজুর রহমান ছবি, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে সঞ্চালনা করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাসরিন জাহান নিসা, লাবণ্য লতিফ, সেঁজুতি আক্তার, আমিনুর রহমান মিলন, আবুল বাশার নান্না।
অনুভূতি ব্যক্ত করে ১৯৭৭ সালের এসএসসি ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, রাজশাহী নিউগভমেন্ট ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. আবেদা সুলতানা জানান, একটি স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী পালন কিন্তু গৌরবের। এনবিপিএম পায়ে পায়ে পার করলো ৫০ বছর।
প্রাক্তন দিলরুবা পারভীন শুভ্রা জানান, আমার হাজবেন্ড আব্দুর রাজ্জাক ছিল এই স্কুলের ছাত্র। সন্তানদের নিয়ে সপরিবারে আসতে পেরে গর্বিত মনে করছি। আমরা খুব সুন্দর অনুষ্ঠান উপভোগ করছি, ভালো লাগছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বর্তমানে ইডেন মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোহেরা সুলতানা রুনী জানান, অনেক বন্ধু বান্ধবীর সঙ্গে ৩০/৩৫ বছর পর দেখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশিতে কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মিলটির শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য ১৯৭২ সালে পাকশী পদ্মা নদীর ধারে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টি ৫০ বছর অতিক্রম করলো।
