রবিবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. ঈশ্বরদী
  4. করোনাভাইরাস
  5. কৃষি
  6. ক্যাম্পাস
  7. খেলাধুলা
  8. গল্প ও কবিতা
  9. চাকরির খবর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. তারুণ্য
  13. দাশুড়িয়া
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

ঈশ্বরদী-জীবনযুদ্ধে হার না মানা শিক্ষক রুবেল

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ ৪:৪৩ অপরাহ্ণ
ঈশ্বরদী-জীবনযুদ্ধে হার না মানা শিক্ষক রুবেল

আর দশজনের মতো তাঁরও দুই পা আছে। কিন্তু সেই দুখানা পা থেকেও যেন নেই রুবেলের। ছেলেবেলায় পোলিও আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেন হাঁটার ক্ষমতা। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই পায়ের বদলে দুই হাতে ভর করে হেঁটে চলেছেন। সমাজের বাঁকা চোখ আর সহপাঠীদের কটুকথা উপেক্ষা করে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। এবার কর্মজীবনে ঢুকেছেন রুবেল। তিনি বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশা। জয় করেছেন শিক্ষার্থীদের মন। সহপাঠীরাও তাঁর প্রতি সদয়।

পাবনার রুবেল হোসেনের জীবনের গল্পটা সাদামাটা মনে হলেও পরতে পরতে লুকিয়ে আছে কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য আর দৃঢ় মনোবল। রুবেল জানান, ছেলেবেলায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ৬ বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হন। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে স্থানীয় কবিরাজের শরণাপন্ন হন মা-বাবা। সঠিক চিকিৎসার অভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে যায় দুই পা। হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। এ কারণে শুরুতেই থমকে যায় লেখাপড়া।

প্রথম দিকে কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষই তাঁকে ভর্তি করতে চায়নি। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন রুবেল। শুরু হয় সংগ্রামী জীবন। বুকে ভর করেও স্কুলে যেতে হয়েছে। সেই লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে আজও চোখে পানি এসে যায় তাঁর।

এলাকাবাসী ও সহপাঠীদের শত কটুকথা কানে তোলেননি রুবেল। বরং অদম্য সাহস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে শেষ করেছেন শিক্ষাজীবন। ২০০৬ সালে এসএসসি ও ২০০৮ সালে এইচএসসিতে মেধার স্বাক্ষর রেখে পাস করেন। পরে দাশুড়িয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি এবং পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বর্তমানে দুই সন্তানের জনক রুবেল হোসেন ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া এম এম উচ্চবিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক। তিনি বিদ্যালয়ের সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক। অন্যান্য শিক্ষকের মতোই তাঁর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এই হার না মানা মানুষটিকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে গর্বিত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ৭ম শ্রেণির ছাত্র সাদ আল রাব্বী ও ৮ম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনি কর্মকার বলে, ‘রুবেল স্যার খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে পড়ান। কখনো বকাঝকা দেন না। আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন। আমরাও স্যারকে খুব শ্রদ্ধা ও সম্মান করি।’

স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘প্রথম দিকে যখন রুবেল স্কুলে আসেন, তখন ভেবেছিলাম তিনি কি পারবেন ক্লাস নিতে! কিন্তু তিনি সব সংশয় দূর করে দিয়েছেন। তাঁর ক্লাস নেওয়ার দক্ষতা অন্য শিক্ষকদের থেকে অনেক বেশি। তিনি একটি হুইলচেয়ার নিয়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করেন। কোনো ক্লাস মিস করেন না। আবার পরীক্ষাও নেন ভালোভাবে। দায়িত্ব পালনে তাঁর কোনো অলসতা দেখিনি। বরং কোনো শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে তাঁর ক্লাসও রুবেল স্যার নেন।’

শিক্ষকতার মাধ্যমে উপার্জন করা সামান্য অর্থে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই শিক্ষক। রুবেল হোসেনের আক্ষেপ, অনেক চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু একটি সরকারি চাকরি পাননি।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

error: Content is protected !!