প্রতি বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও প্রায় ১০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয়ের লক্ষ্যে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন অঞ্চলে কোনোরকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পদ্মা নদীতীরবর্তী লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের বিলকেদা, কামালপুর, দাদাপুর এলাকায় চলছে বেশিরভাগ ইটভাটায় ইট তৈরির প্রস্তুতি।
এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হয় কাঠ। এমনকি বড় বড় গাছ ও কাঠ ফারাই করার জন্য অধিকাংশ ভাটায় টিম্বার বা কাঠ ফারাই করার স’ মিল বসানো হয়েছে। অবৈধ এসব ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করার জন্য যেসব মাটি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো পদ্মা নদী ও বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি থেকে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেন অসাধু লোকজন। এছাড়া অনেক জায়গায় ইটভাটার মালিকরা নিজেরাই নদী থেকে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যান।
এসব ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। মাটি কাটায় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি।পদ্মা নদী ও আশপাশের বিভিন্ন ফসলি জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ইটভাটায় মাটি ও কাঠের অতিরিক্ত ভাড়ী যানবাহন যাতায়াতের কারনে স্থানীয় সড়কগুলো সংস্কারের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
এসব অবৈধ ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীদের কারনে ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলাবাসীর আশির্বাদ খ্যাত মুজিব বাঁধটিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্পেটিং উঠে, বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাঁধটি প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে চলেছে। এসব কারণে প্রতিবছরই শুধু রাস্তা মেরামতেই শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তা ঠিক রাখার জন্য ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে লোহার বারপোস্ট দিয়ে বেরিকেড তৈরী করেও কোন কাজ হয়নি। এছাড়াও ধুলোবালিতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীদের এসব সমস্যা সকল মহলের জানা থাকলেও প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেই।
এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন জানান, ওই এলাকার রাস্তা ইটভাটা, মাটি এবং বালুর ব্যবসায়ীদের কারনে বেশিদিন স্থায়ীত্ব হয় না। সংস্কারের কয়েকদিনের মাথায় সড়কের বিভিন্ন অংশে কার্পেটিং উঠে ছোট বড় গর্তে সৃষ্টি হয়। গেল কয়েকদিন আগেও ওইসব এলাকায় কিছু সড়ক সংস্কার করা হয়েছে এবং সেগুলো রক্ষায় ভাড়ী যানবাহন চলাচল বন্ধ করার জন্য এলজিইডি অফিসের বিশেষ উদ্যোগে বারপোস্ট পুঁতে দেওয়া হয়। এ কারণে অতিরিক্ত বোঝাই গাড়ী চলাচল নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই রাতের আধারে কে বা কারা সেই বারপোস্টগুলো ভেঙ্গে দেয়। এখন সেসব রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ী গাড়ি চলাচল করছে।
এলাকাবাসী জানান, দিন রাত রাস্তা ও বাঁধের ওপর দিয়ে মাটি ও ইটভাটার বিভিন্ন ভাড়ী যানবাহন চলাচলের কারনে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। মুজিব বাঁধটি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রচন্ড ধূলাবালিতে বাড়িতে বসবাস করার দুস্কর হয়ে পড়েছে। খাবারের মধ্যে ধূলা কিচকিচ করে। রাতে ঘুমাতে গেলে বিছানারও একই অবস্থা হয়। টিনের চালাসহ ঘরের আসবাবপত্রে ধূলা জমে সেগুলো নষ্ট হয়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই এলকার মাটি বেশ উর্র্বর তাই যেকোনো ফসলের বাম্পার ফলন হয়। বেশিরভাগই বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ করেন তারা। তবে ইটভাটার ছাই উড়ে আসায় ও মাটি বহনের কারনে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া নদী থেকে মাটি কাটার কারনে ফসলি জমি বিলিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় নানা মুখি চাপের মুখে বাধ্য হয়েই ভাটা মালিকদের কাছে মাটি কাটার জন্য জমি বিক্রি করতে হয় বলেও জানান কৃষকরা। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কাষ্টম ও আয়কর বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সততার সাথে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।