মাছ চাষ বদলে গেছে ঈশ্বরদীর অর্থনীতির। এখান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সরবরাহ হচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে। চাষিরা লাভের মুখ দেখায় বর্তমানে মাছের এই চাষ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকাগুলোতেও।
ফরমালিন আতঙ্কে অনেকেই যখন মাছ কিনতে ভয় পাচ্ছেন তখন ঈশ্বরদী উপজেলার ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের উৎপাদিত তাজা মাছ। এসব গ্রামে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই পুকুর আর পুকুর। আর এসব পুকুরে চাষ হচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, তেলাপিয়া, পাংগাসসহ বিভিন্ন মাছ। পুকুর থেকে মাছ ধরার পর পানি ভর্তি ড্রামে করে তোলা হয় ট্রাকে। সেই ট্রাক চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ পাবনা, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী গ্রামে পৌঁছালেই চোখে পড়বে বিশাল দুটি বিল। একটির নাম চামগড়া অপরটি পদ্ম। এ দুই বিলজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫০ পুকুর। প্রতিটি পুকুরেই হচ্ছে মাছ চাষ। আর এতেই ভাগ্য ফিরেছে মারমী গ্রামবাসীর।
মাছচাষিরা জানান, মারমী গ্রামজুড়ে রয়েছে চামগড়া ও পদ্ম বিলের বৃহৎ অংশ। পাশাপাশি সুলতানপুর, হাতিগড়া, বয়রা, শ্যামপুর গ্রামেও রয়েছে এ দুই বিলের সীমানা। বিলের পার্শ্ববর্তী ৫ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ এক সময় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত। তবে মাছ চাষ বদলে দিয়েছে এখানকার অর্থনীতি। এখানে মাছ চাষে প্রায় ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩ কিলোমিটার প্রস্থ এ দুই বিলে একসময় বছরজুড়ে জলাবদ্ধতা ছিল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শুধু শীতকালে বিলের এক-তৃতীয়াংশ জমিতে ধান চাষ হতো। বাকি সময় জলবদ্ধতার কারণে অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকত এসব জমি। প্রায় ১৫ বছর আগে এ বিলের জমির মালিকরা পুকুর খনন শুরু করে। খননের মাটি পুকুরের চারপাশের পাড় প্রশস্ত করে ভরাট করে। পাড় উঁচু হওয়ায় সবজি ও ফলমূলের আবাদের উপযোগী হয়। একসময় জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা শত শত একর জমিজুড়ে এখন শুধু পুকুর আর পুকুর। প্রতি বছর বেড়েই চলেছে পুকুরের সংখ্যা।
জানতে চাইলে মারমী গ্রামের মাছচাষি আব্দুল হান্নান জানান, এক সময় বিলের অধিকাংশ জমি অনাবাদি ছিল। বছরজুড়ে জলাবদ্ধতা থাকত। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বছরের একবারের বেশি ফসল হতো না। এসব অনাবাদি জমিতে পুকুর খনন করে মালিকরা যেমন লাভবান হয়েছে, তেমনি পুকুর লিজ নিয়ে মাছচাষ করেও অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখানকার হাজারো মানুষ মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মাছের পাশাপাশি পাড়ে সবজি ও ফলমূল চাষের সুযোগ হয়েছে।
মুলাডুলি গ্রামের মাছচাষি শরিফুল ইসলাম জানান, মাছ চাষে ব্যাপক লাভ হয়। উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। অন্যান্য চাষের চেয়ে মাছ চাষে বেশ লাভবান হওয়া যায়।
দাশুড়িয়া গ্রামের মাছচাষি আনিসুর রহমান জানান, এ দুই বিলে ছোট পুকুর বেশি। এখানে সর্বনিম্ন ১০ কাটা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৭ বিঘার বিশাল পুকুরও রয়েছে। সেখানে দেশি-বিদেশি মাছ চাষ হয়।
দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার জানান, জলাবদ্ধতার কারণে বহু বছর ধরে এ দুই বিল অনাবাদি ছিল। চার বছর আগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়। ফলে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক পুকুরে শুরু হয় মাছ চাষ। যার বিশাল প্রভাব এই এলাকার অর্থনীতিতে পড়ছে। মাছচাষিরা এখন স্বাবলম্বী। পাশাপাশি হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন- ঈশ্বরদীতে মোট ২৪৭৬ পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে মুলাডুলি ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নে পুকুর বেশি।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী ও সুলতানপুরসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামে মাছের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। এখানকার মৎস্যচাষিরা দেশি জাতের মাছ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। মাছ চাষিদের যে কোন সহযোগিতায় পাশে থাকবে উপজেলা মৎস্য অফিস।