শহরের আনাচ-কানাচে, গ্রামের হাটবাজারে ও বাস-ট্রেনে বাঁশির সুরে দর্শক মাতান রহমত আলী খান। কখনো সালাম সালাম হাজার সালাম, কখনো এক নদী রক্ত পেরিয়ে, আবার কখনো যাও পাখি বলো তারে সে জেনো ভোলে না মোরে, আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন, এমন ডজনখানেক গানের সুর বাঁশিতে তুলে দর্শকদের বিমোহিত করেন রহমত আলী।
৮০ বছর বয়সেও তার বাঁশির সুর দর্শকদের মুগ্ধ করলেও খুবই অর্থকষ্টে চলে জীবন। বাঁশির সুরের মুগ্ধতা ছড়িয়ে তিনি দর্শকের কাছে বাঁশি বিক্রি করেন। পাশাপাশি বাঁশির সুর শুনে কেউ তাকে উপহার হিসেবে কিছু টাকা দিলে তা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেন।
এ বয়সে যখন মানুষ অবসরে সময় কাটান তখন তিনি সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি মাইলের পর মাইল হেঁটে, বাস-ট্রেনের মধ্যে বাঁশি বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জীবন সায়াহ্নে সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে পথচলা রহমত আলীকে দেখে অনেকেই ব্যথিত হন। কিন্তু জীবনতো চালাতে হবে তাই বাঁশি হাতে নিয়ে নিত্য তার এই ছুটে চলা।
রহমত আলী খান পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের নছির খানের ছেলে। তিনি বলেন, ‘৫০ বছর আগে প্রতিবেশী এক চাচার কাছে বাঁশি বাজানো শিখেছি। গ্রামের মাঠে প্রান্তরে এবং গাছের শীতল ছায়ায় বসে মনের আনন্দে বাঁশি বাজাতাম। কখনো ভাবিনি এ বাঁশি একদিন আমার জীবন জীবিকার অবলম্বন হবে। দাশুড়িয়া রেল স্টেশনের পাশে আমার একটি একটি চায়ের দোকান ছিল।
করোনার সময় বন্ধ হয়ে যায় দোকান। এ বয়সে আর কোনো কাজ করার সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়ে বাঁশি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ি। আমার বাঁশি শুনে অনেকেই মুগ্ধ হন। সবাই উৎসাহ দিতে শুরু করলেন বাঁশি বাজানোর কাজটা যেন আমি চালিয়ে যাই। কিন্তু বাঁশি বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা হয়তো আমার জন্য কঠিন হতো। তাই বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি বাঁশি বিক্রি শুরু করি’।
কুষ্টিয়া ও সিরাজগঞ্জ থেকে আড় বাঁশি, কোকিল বাঁশি, কোদ বাঁশি, ১০ স্কেল ও ১১ স্কেল বাঁশিসহ বিভিন্ন ধরনের বাঁশি কিনে এনে বিক্রি করেন। তার কাছে ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দামের বাঁশি আছে।
ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনে চড়ে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বাস উঠে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করেন। আবার কখনো ঈশ্বরদী শহরের বাজার, পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তার। যা দিয়ে তিন জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বৃদ্ধ রহমত আলী।
দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, ‘রহমত আলী খান খুব ভালো বাঁশি বাজায়। পাশাপাশি বাঁশি বিক্রি করেন। এটি আমি শুনেছি এবং দেখেছি। তিনি কখনো কোনো সহযোগিতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে আসেননি’।