২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি আহরণের হার, আখের জমি, লোকসানের পরিমাণ এবং ব্যবস্থাপনার খরচ বিবেচনায় পাবনা চিনিকলসহ ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই না করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই পাবনা চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে এই মিলটি।
উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া নামক জায়গায় ১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর ৬০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয় পাবনা সুগার মিল। এটি চালু করতে ব্যয় করা হয় ১২৫ কোটি টাকা। মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে কারখানাটি। চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেলার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আখ চাষ শুরু হয়। অন্য কয়েকটি মিলের সাথে তাল মিলিয়েই চলছিল মিলটি। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মিলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে।
ফলে খোলা আকাশের নিচে অযতেœ ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার পথে প্রতিষ্ঠানটির। চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশনের নানামুখী আন্দোলনের পরও চিনিকল চালুর কোনো উদ্যোগ আসেনি। মিলটি আদৌ চালু হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০। স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলেও জীবন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন অস্থায়ী কর্মচারীরা। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতিও প্রেরণ করা হচ্ছে অন্য সুগার মিলে। চালুর ঘোষণা না আসায় স্থায়ীভাবে বন্ধের পথে পাবনার ঐতিহ্য ভারী এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিল গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গার্ড আর প্রশাসনিক কাজ চালু রাখতে এমডিসহ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কেউ নেই। চিনিকলের ভেতরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে আখ পরিবহনের দুই শতাধিক ট্রলি। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।
চিনিকল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, চিনিকলের ভেতরে পড়ে আছে আখ পরিবহনের দুই শতাধিক ট্রলি। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আখ মাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোঙ্গা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউস, রুলার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় দাশুড়িয়া গ্রামের আখচাষি সুরুজ আলি বলেন, বন্ধ ঘোষণার সময় চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের উৎপাদিত আখ কাছের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও নাটোর চিনিকলে বিক্রি করতে পারবেন বলে জানায়। কিন্তু সে প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। ফলে আখ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে চলতি মৌসুমে অনেক চাষি আখের জমিতে সবজি চাষ করেছেন।
পাবনা জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি আনছার আলী ডিলু জানান, চিনিকলটি বন্ধ হলে অনেক পরিবার জীবন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পরবে। লাভজনক শিল্পে পরিণত করে মিলটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ চিনিকল আখ চাষি ফেডারেশনের মহাসচিব এবং পাবনা জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী ওরফে পেপে বাদশা বলেন, ‘কৃষকদের স্বার্থে দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল আখের উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য বন্ধ মিল চালু করা দরকার।
পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.আখতারুজ্জামান বলেন, ‘চিনিকলটি এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এটি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে যতদিন পর্যন্ত চালু না হচ্ছে, তত দিন পাবনা জেলার আখ চাষিদের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এখানকার স্থায়ী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতিগুলো যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য পলিথিনে মোড়ানো হয়েছে। দপ্তরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তা অন্য মিলে প্রেরণ করা হচ্ছে। কিছু যন্ত্রাংশ চলে গেছে বাকিটা মিল চালু হলে প্রেরণ করা হবে।