পাবনার এসপির সহায়তায় হারানো শিশু ফিরে গেল মায়ের কোলে
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) ঘড়ির কাঁটায় রাত ১১টা। মায়ের সঙ্গে অভিমান করে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী এসবি ট্রাভেলসে চড়ে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ট্রাফিক মোড়ে চলে আসে ১১ বছরের শিশু কাউসার হোসেন।
পরে পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মহিবুল ইসলাম খানের সহায়তায় হারানো শিশুটি ফিরে গেল তার মায়ের কোলে।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাত ১০টায় পাবনা জেলা পুলিশ ও ঈশ্বরদী থানা পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুটিকে তার মা-বাবার কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত ১১টায় ঢাকাগামী বাসে করে মা-বাবার সঙ্গে রওনা হয়েছে শিশুটি।
শনিবার (১৩ আগস্ট) সকালে পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসচালক মনু ড্রাইভার এবং সালমা বেগম দম্পতির ১১ বছরের সন্তান কাউসার মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়। ঢাকার মিরপুর থেকে সাভারে খালার বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে ‘এসবি ট্রাভেলস’ নামে একটি বাসে চড়ে বাসে। শিশুটি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে সুপারভাইজার আর ডাকেনি। বাসটি যখন ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া এসে পৌঁছায়। তখন রাত ১১টা প্রায়। তখন শিশুটি ঘুম ভেঙে গেলে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে ওই বাসের চালক শিশুটিকে বাস থেকে নামিয়ে ঈশ্বরদী ট্রাভেলস কাউন্টারে রেখে সকালে ঢাকার বাসে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করে।
বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক গণমাধ্যম ‘ফেসবুকে’ শিশুটির কান্নার ছবি ছড়িয়ে পড়লে পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মহিবুল ইসলাম খানের নজরে পড়ে। তাৎক্ষণিক তিনি ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকারকে অবগত করে শিশু বাচ্চাটিকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপার পাবনার নির্দেশ পেয়ে রাতে টহল পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী থানায় নিয়ে আসেন। ঈশ্বরদী থানা পু্লিশের নারী ও শিশু ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-পরিদর্শক (এসআই) দোলা পারভিনের মাধ্যমে নারী ও শিশু ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয় শিশুটিকে। পরে ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার ওই শিশুটির সঙ্গে কথা বলে শুধুমাত্র বাড়ির ঠিকানাটা জানতে পারে। তবে এসময় ফোন নাম্বার পায়নি।
ওই শিশুটির দেওয়া তথ্যমতে ঢাকার মিরপুর-২ এলাকার মধ্যম পীরেরবাগ, ৬০ ফিট জনতার গলিতে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশু কাউসারের বাড়ি খুঁজে বের করেন এবং তার মা-বাবার সন্ধান পান। পরে তারা ঈশ্বরদী থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ঈশ্বরদী থানায় আসতে বলেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায়, ওই শিশুর মা-বাবা ছুটে আসেন ঈশ্বরদীতে। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার তাদের স্নেহ ও আদরের ছেলেটকে তাদের হাতে তুলে দেন। শিশু সন্তানকে ফিরে পেয়ে মা-বাবার বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর ঊচ্ছাস। আর সন্তানও মা-বাবাকে পেয়ে যেন আত্মহারা।
এসময় ওই শিশুর মা সালমা বেগম এবং বাবা পাবনা জেলা পুলিশের প্রশংসা করে মঙ্গল কামনা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান অনুভূতি জানিয়ে জানান, মানবিক কাজগুলো পাবনা জেলা পুলিশ প্রায় করে থাকে। মূলত: কোমলমতি শিশুটি যদি পুলিশের নজরে না আসতো, তাকে উদ্ধার না করা হতো, তাহলে শিশুটির জীবনটাতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতো। হয়তোবা শিশুটি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো, শিশু পাচারকারীর হাতে পড়তো। আমরা শিশুটিকে তার পরিবারে ফিরিয়ে দিতে পেরে আনন্দিত।
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান আরও জানান, শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করেছিল। আমি রাতেই বার্তাটি পেয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকারকে নির্দেশ দেয়, শিশুটিকে আগে উদ্ধারের জন্য। পরবর্তী সময়ে শিশুটির দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ শিশুটির মা-বাবাকে খুঁজে পেয়ে ঈশ্বরদী আসতে বলেন। আমরা শিশু কাউসারকে তার মা-বাবার কোলে তুলে দিতে যে পেরেছি সত্যিই তা আনন্দের।
উল্লেখ্য পাবনা পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান পাবনাতে যোগদানের পর থেকে এরকম অনেক মানবিক কাজ করে প্রশংসা অর্জন করেছেন।