করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার প্রতারণার মামলায় জে কে জি হেলথ কেয়ারের চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৮ জনের ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন— আবু সাঈদ চৌধুরী, হিমু, তানজিলা, বিপুল, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। মামলাটিতে মোট ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
এর আগে সকালে আসামিদের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। তাদের রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ নাহিদ হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি হেলথকেয়ার ২৭ হাজার মানুষকে ভুয়া রিপোর্ট দেয়। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করলে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবরিনা ও আরিফসহ আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও এবং জেবুন্নেসা।
চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে প্রতারণার মূলহোতা বলে উল্লেখ করা হয়। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে জানানো হয়। একই বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। সেসময়ও তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।
বাতিল হতে পারে ডা. সাবরিনার চিকিৎসা সনদ
করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলায় ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আলোচিত চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আটজনকে। ২০২০ সালে গ্রেফতারের পর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাবরিনার এবার চিকিৎসক সনদ বাতিল হতে পারে।
চিকিৎসক সনদ দেওয়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। যদিও সনদ বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রায়ের কপি হাতে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরমান হোসেন।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতের রায় হলে তার নিবন্ধন বিষয়ে আমাদের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই চিকিৎসক নিবন্ধন বাতিল হয়ে থাকে। সাবরিনার বিষয়ে রায়ের কপি আসার পর নীতিনির্ধারকেরা আলোচনায় বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আদালত থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা এলে আলোচনা ছাড়াই চিকিৎসক নিবন্ধন বাতিল করার সুযোগ থাকে।
আরমান হোসেন আরও জানিয়েছেন, আমাদের কাছে এখনও রায়ের (ডা. সাবরিনার) কপি এসে পৌঁছায়নি। কোর্ট আমাদের এ বিষয়ে জানালে তখন আলোচনার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএমডিসি সূত্রে জানা গেছে, গত দু’দিন আগে এই সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। ফলে সাবরিনার বিষয়ে আদালতের কপি আসলেও কবে নাগাদ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে, তা এখনও নিশ্চিত করা বলতে পারছেন না সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিরা।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) করোনাকালীন নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ আট আসামির ১১ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন দণ্ডবিধির পৃথক তিন ধারায় এই রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ছয় আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা ছাড়াই ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয় জেকেজি হেলথকেয়ার। এর বেশিরভাগই ‘ভুয়া’ বলে চিহ্নিত হয়। পরবর্তীকালে এই অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এরপর ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হলে দুজনকেই গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তদন্ত শেষে ওই বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবরিনা-আরিফসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী।
এদিকে, ২০২০ সালের ১২ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তখন ওই আদেশে বলা হয়েছিল, ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট ও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারের অনুমতি ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকা এবং অর্থ আত্মসাৎ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল), বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে জন্য ডা. সাবরিনাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ১২ (১) বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তিনি সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন বিধিমোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্ত হবেন বলেও ওই সময় চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।