চলতি বছরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় আষাঢ় মাসে ঠিক তেমন একটা বৃষ্টির দেখা মেলেনি। প্রচণ্ড খরা পার করে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ে আবহাওয়া কিছুটা অনুকুলে আসে। কয়েকদিন বৃষ্টির পানি পেয়েই খরিপ-২ মৌসুমে রোপা আমনের বিভিন্ন জাতের ধান গাছের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
শুক্রবার (২৯ জু্লাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায় কৃষকদের কর্মচাঞ্চল্যের এমন চিত্র।
সরেজমিনে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে মহিষ দিয়ে জমি চাষ করা শুরু করেছেন। কেউ জমি প্রস্তুত করতে, কেউ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলতে আবার কেউ ভাটিয়ালি গানের সুরে সুরে জমিতে চারা রোপণ করতে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা চুক্তি ভিত্তিতে এসেও কাজ করছেন। বিঘা প্রতি জমিতে ধানের চারা বপণের কাজে তাদের মজুরি মেলে এক হাজার ৭০০ টাকা। এভাবে এক একটি গ্রুপে ১০ জন করে শ্রমিক একসঙ্গে কামলা দিয়ে থাকেন।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়ন ময়দানদীঘী গ্রামের বাসিন্দা সাবু প্রমানিক জানান, আমাদের গোটা গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। প্রতি বছরের আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আমরা দল বেঁধে ধান লাগাই। সারাদিনে পাঁচ বিঘা জমিতে ধান বপন করা সম্ভব হয়। জমি থেকে ধানের চারা তুলে বপন করে বিঘা প্রতি মজুরি পাই এক হাজার ৭০০ টাকা। সেখান থেকে খাওয়া খরচ বাদ দিলে সারাদিনে আয় থাকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
রদীর পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল কলপাড়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, আষাঢ় মাসে বর্ষায় রোপা আমনের চারা রোপণ করার সময়। এ বছর আষাঢ়ে বৃষ্টি অনেক কম হয়েছে। শ্রাবণ মাসের শুরুতে রোপা আমনের চারা বপনের উপযুক্ত সময়। কিন্তু এ বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে একটু দেরিই হয়ে গেল। সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক শ্রমিকরা অন্য পেশায় চলে গেছেন। তাছাড়া কম হাজিরায় কাজ করতে চাই না। তাই বাহিরের জেলা থেকে শ্রমিকরা চুক্তিতে কাজ করছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা ইন্না জানান, ঈশ্বরদী পৌর এলাকাসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে চলতি বছর খরিপ-২ রোপা আমন উফশী জাতের ধান আবাদ হচ্ছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। শ্রাবণের শুরুতে এ জাতের ধান রোপণের মৌসুম। ঈশ্বরদী পৌর এলাকাসহ উপজেলায় ২০১ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করেছেন চাষিরা।
তিনি আরও জানান, উপজেলার সাত ইউনিয়নে ১৮১ হেক্টর জমি চাষের উপযোগী করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এখানে রোপা আমনের ব্রি-ধান জাতের আবাদ করেন এ এলাকার কৃষকরা। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা ধান গাছের রোগবালাই কম হলে এবারে বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন কুষকরা।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, চলতি বছরে আষাঢ় মাসে প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে। তবে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হওয়ার বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদী পৌর এবং উপজেলার সাত ইউনিয়নে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৭০০ প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে রোপা আমন ধানের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তাদের দেওয়া ধানের জাতগুলো হচ্ছে- উপসী রোপা আমন ব্রি-ধাণ-৮৭, ৮০, ৭৫ ও ১৭। এসব আধুনিক আমন ধান চাষ করে সেচ ছাড়া ও কম সার ব্যবহার করে বাম্পার ফলন পাওয়া সম্ভব। এছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দিতে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। আর সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে বিঘা প্রতি ৩০ মন পর্যন্ত ধানের ফলন পাওয়া সম্ভব।