ভরা পদ্মার আগ্রাসী রূপ
নদীভাঙন শুরু হওয়ায় পাবনার ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী কয়েক গ্রামের মানুষ ভাঙনের আতঙ্ক রয়েছেন। ভাঙনের ফলে সাঁড়ার নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধ ও লালনশাহ সেতুর রক্ষাবাঁধ হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙন ও পানির তীব্রতা বাড়লে বাঁধটি যেকোনো সময় হুমকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
আজ সোমবার ( ২০ জুন ) সরেজমিনে গ্রামগুলো ঘুরে জানা গেছে, বর্ষা শুরু হতে না হতেই এবার পদ্মা নদীর বাঁধের সীমানার খুব কাছাকাছি ভাঙন এগিয়ে এসেছে। এতে নদীর তীরবর্তী মানুষেরা অনেকটা শঙ্কার মধ্যে রাত কাটাচ্ছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে থানাপাড়া ও ব্লকপাড়ায় বাঁধ এলাকা ভাঙছে। এরই মধ্যে পানির তোড়ে বাঁধের সামনের প্রায় ১০ বিঘা জমি বিলীন হয়েছে।
এ বিষয়ে গ্রামবাসীরা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পদ্মায় হু হু করে বাড়ছে পানি। সাঁড়া ঘাটের সীমানায় ৭-৮ দিনের ব্যবধানে নদীতে প্রায় ৫ ফুট পানি বেড়েছে। পানি বাড়ার কারণে সাঁড়ার ৫ নম্বর ঘাটের সামনের চরের ৫০ বিঘা অনাবাদি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ব্লকপাড়ার সামনে নদীর তীরে সরকারি উদ্যোগে তৈরি করা চিতল ও দেশীয় প্রজাতি মাছের অভয়াশ্রমও ভেসে গেছে।
নদীভাঙনের কারণে হুমকির মধ্যে রয়েছে তীর সংরক্ষণ বাঁধ। ছবি: আমাদের ঈশ্বরদী
পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, বাঁধ নির্মাণের আগে এই এলাকার শত শত বিঘা জমি, বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার মানুষ আর যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
সাঁড়ার ঝাউদিয়া গ্রামের দলিলুর রহমান বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস আগে নদীতে সরকারি উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ছয় মাস পর আবারও নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় বাঁধের কাছে এসেছে। এ কারণে আমরা আতঙ্কে আছি।’
একই গ্রামের রফিকুল শেখ বলেন, ‘সাঁড়ার ব্লকপাড়া বাঁধের কাছে পানির চাপ খুবই বেশি। এখানে নিচে “গলন” থাকায় পানির চাপে দুই দিনে বাঁধের সামনে প্রায় ৬০ মিটার জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।’
ঈশ্বরদী সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, এর আগেও ভাঙন দেখা দেওয়ায় সাঁড়ার কয়েকটি স্পটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে তিন দফায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। জিও ব্যাগ ফেলার কারণে তখন নতুনভাবে আর ভাঙন হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, এবারের পরিস্থিতি মৌখিকভাবে শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হবে।
নদীভাঙনের সত্যতা স্বীকার করে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙন-কবলিত এলাকা সরজমিন দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন আগেও সাঁড়ার এলাকাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি গুরুতর হলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙনরোধের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরির কাজও চলছে।