ঈশ্বরদীর পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে কলাচাষে বিপ্লব ঘটেছে। চরের যতদূর চোখ যায় শুধু কলার বাগান। সবুজ পাতার মাঝে হাজার হাজার কলার কাদি ঝুলে থাকা কলা দৃশ্যমান হওয়ায় ফুটেছে চাষিদের মুখে বিজয়ের হাসি। স্বল্প ব্যয়ে লাভ বেশি হওয়ায় ৪ বছর ধরে চরাঞ্চলের চাষিরা ঝুঁকেছেন কলা চাষে। কলা চাষে কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে। ইতোমধ্যেই ভাগ্য বদলেছে অনেক কৃষকের।
ঈশ্বরদী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১,৮৪০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নেই ১,৮০০ হেক্টর জমিতে কলা আবাদ হয়েছে। কলাচাষে লাভবান হওয়ায় ইউনিয়নের লক্ষীকুন্ডা, কৈকুন্ডা, কামালপুর, দাদাপুর ও ডিগ্রীর চর জুড়ে এখন কৃষকদের আর অন্য ফসল চাষে আগ্রহ নেই। এবারে শুধু কলার আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা।
কামালপুর চরের কলাচাষি মামুন বলেন, ৪০ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছি। ফলন বাম্পার হয়েছে। কলার আবাদ করে চরের কৃষকরা খুবই লাভবান হচ্ছেন। কলার আবাদে সার-বীজ এবং শ্রমিকের খরচ কম হয়। অন্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে পরিশ্রমও কম হয়। কলা বিক্রিতেও ঝামেলা নেই। পাইকাররা বাগানে এসে কলা কিনে নিয়ে যায়। কলা চাষে লাভবান হওয়ায় ইতোমধ্যেই কয়েকজন কৃষক পাকা সুন্দর বাড়ি করেছেন। কৃষকরা অনেকেই পাওয়ার ট্রিলার, ইঞ্জিন চালিত ট্রাক্টর, হারভেস্টার মেশিন কিনেছেন।
দাদাপুর চরের চাষি হাসান জানান, কলা চাষে এ চরের কৃষকদের ভাগ্য বদলে গেছে। সকল কৃষকই এখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। ৫০ বিঘা জমিতে কলা আবাদ করেছি জানিয়ে তিনি বলেন বিঘা প্রতি লাভ হয়েছে কমপক্ষে ৫০-৬০ হাজার টাকা। কলা ছাড়া এচরে অন্য আবাদ নেই বললেই চলে। অথচ ৫ বছর আগেও এই চরে কেউ কলার আবাদ করতো না।
দাদাপুর চরের আরেক চাষি আমিরুল বলেন, ১০ বিঘা জমিতে কলা আবাদ করেছি। বিঘাতে চাষাবাদ বাবদ খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। কলা বিক্রি হচ্ছে এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আগে এখানে গাজর, মুলা, পিঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হতো। এসব চাষাবাদে খরচ বেশি, লাভ কম। তাই এখন সকলে কলার আবাদ শুরু করেছে।
লক্ষীকুন্ডা ইউপি’র কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, কলা চাষে এই ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে। সকলে কলা চাষে ঝুঁকেছেন। কলাচাষে বিঘা প্রতি খরচ ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এখানে সবরি কলার বেশি আবাদ হয়। পাশাপাশি সাগর, মেহের সাগর ও অমৃত সাগর কলার আবাদও হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার জানান, পদ্মার চরাঞ্চলে এবার কলার ভাল ফলন হয়েছে। কৃষকরা লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে। কলা চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।