ঈশ্বরদীর পদ্মার চরজুড়ে বাদাম তোলা, শুকানো ও বিক্রির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষকরা। বাদাম বিক্রি করে গত বছরের তুলনায় ফলন ও দাম বেশি পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
একসময় পদ্মার বিস্তীর্ণ বালুচর অনাবাদি পড়ে থাকত। চরের বালুতে ফসল না হওয়ায় সেদিকে কারো নজর ছিল না। এখন সে বালুচরে ফলছে বিভিন্ন জাতের বাদাম। কৃষকদের কাছে এ যেন বালুর নিচে লুকানো মুঠো ভরা সোনা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বাদামের চাষ হয় সাঁড়া ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া চর, ইসলাম পাড়া, আরামবাড়িয়া, শেখেরচক ও সাঁড়া গ্রামের চরজুড়ে এবার বাদামের আবাদ হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, ডিগ্রিরচর, কামালপুর ও লক্ষ্মীকুন্ডা চরেও বাদামের চাষ হয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা বাদাম চাষে খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ বাদাম হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির বাদাম বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। গতবারের তুলনায় মণ প্রতি বাদামের দাম বেড়েছে প্রায় এক হাজার টাকা।
শেখেরচক গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, এ চরে এক সময় আমার বাপ-দাদার ভিটা ছিল। নদী সব কেড়ে নিয়েছে। ধূ ধূ এ বালুচরে ১০ বছর আগেও কোনো ফসল হতো না।
এখন চরের মাঠে তাকালে শুধু সবুজের সমারোহ চোখে পরবে। চরজুড়ে শুধু বাদাম আর বাদাম। চাষিরা অনাবাদি বালুচরে বাদাম চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। তাই প্রতিবছরই এখানে বাদামের চাষ বাড়ছে।
ইসলামপাড়া গ্রামের সরোয়ার হোসেন সোহাগ বলেন, ১০ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছি। চাষাবাদ খরচ বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলন ও লাভ ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি। আগামীতে এ চরে আরও বেশি বাদাম চাষ হবে।
মাঝদিয়া ঘোষপাড়া গ্রামের কলিম উদ্দিন বলেন, বাদাম তোলা, শুকানো ও বিক্রির কাজে কৃষকরা ব্যস্ত। বাদাম বিক্রির পাশাপাশি বাদামের গাছও গোখাদ্য হিসেবে বিক্রি করে অনেক টাকা পাওয়া যায়। তাই বাদাম চাষে খরচ কম লাভ বেশি।
লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর চরের কৃষক লুৎফর বলেন, ১০ জন কৃষক যৌথভাবে ৩০ একর জমিতে বাদাম আবাদ করেছি। ফলন হবে প্রায় ৯০০ মণ। যার বাজার মূল্যে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। চাষাবাদে ১৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লাভও বেশি হবে।
দিনমজুর রত্না খাতুন বলেন, এক মণ বাদাম তুললে ৪০০ টাকা দেয়। প্রতিদিন এক মণ থেকে দেড় মণ পর্যন্ত বাদাম তোলা যায়। ফলন ভালো হওয়ায় এবার আমাদেরও আয়ও ভালো হচ্ছে।
এ উপজেলায় কৃষি অফিসের তথ্যমতে ১৬০ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়। যদিও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা এ তথ্য মানতে নারাজ। এটি আরও তিন বছর আগের তথ্য।
এবার কমপক্ষে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। একজন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, জুন মাসের শেষে আমরা ফসলের মাঠ জরিপের কাজ করি। এখনো জরিপ কাজ শুরু হয়নি। জরিপ শেষে এবছরের সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, পদ্মার তীরবর্তী সাঁড়া ইউনিয়ন ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। এখানে বিনা ও বারী জাতের বাদামের চাষাবাদ বেশি হয়।