নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কোনো জমি বা খেলার মাঠে
কেউ অনুমোদন ছাড়া ঘর নির্মাণ ও ভাড়া দিতে পারেন না।
ঈশ্বরদী পৌর এলাকার মধ্য অরণকোলা মহল্লার এক সরকারি খেলার মাঠ দখল করে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি গুদাম নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মাঠটিতে মধ্য অরণকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঈশ্বরদী পৌর বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীসহ মহল্লার শিশুরা খেলাধুলা করে।
ওই জনপ্রতিনিধির নাম ইউছুব আলী প্রধান। তিনি ঈশ্বরদী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) টি এম রাহসিন কবির বলেন, সরকারি কোনো জমি বা খেলার মাঠে কেউ অনুমোদন ছাড়া ঘর নির্মাণ ও ভাড়া দিতে পারেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, পাশাপাশি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সামনেই খেলার মাঠটি। মাঠের এক কোণে ঈদের নামাজের জন্য একটি মিনার। এরপর মসজিদ। মসজিদটির পাশে তৈরি হয়েছে গুদামটি। গুদামটির দেয়াল পাকা আর ছাদ টিনের। গুদামের কারণে খেলার জায়গা সংকুচিত হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নূরুল হক গুদামটি ভাড়া নিয়েছেন। তিনি বলেন, মাসিক সাত হাজার টাকায় তিনি কাউন্সিলর ইউছুব আলী প্রধানের কাছ থেকে ঘরটি ভাড়া নিয়েছেন। ভাড়ার টাকা তিনি তাঁকেই দেন।
স্থানীয় লোকজন ও বিদ্যালয় দুটির শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি মাঠটি স্থানীয় লোকজন ঈদগাহ মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতেন। বছরে দুবার ঈদের জামাত হয় আর বাকি সময়টা সেখানে শিশুরা খেলাধুলা করে। ১৯৯০ সালে মাঠের পাশে মধ্য অরণকোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। এর কিছুদিন পর ঈশ্বরদী পৌর বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাঠের পাশে একটি মসজিদ আছে। মসজিদের নির্মাণকাজ চলাকালে নামাজ আদায়ের জন্য অস্থায়ীভাবে মাঠে ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হলে মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ পড়া শুরু করেন। কিন্তু মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলর ইউছুব ঘরটি আর ভাঙতে দেন না। উল্টো সেটা মেরামত করে গুদাম করে ভাড়া দেন। তাঁরা গুদামটি সরিয়ে দিতে বললেও তিনি কর্ণপাত করছেন না।
মধ্য অরণকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, জায়গাটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। স্থানীয় শিশুদের পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। মাঠের কোনায় পাকা ঘরটি খেলার পরিবেশ বিঘ্নিত করেছে।
কাউন্সিলর ইউছুব আলী প্রধান বলেন, মাঠটির ওপর শুধু বিদ্যালয় দুটির অধিকার নয়, মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠেরও অধিকার আছে। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তাঁর দাবি, নিজের জন্য নয়, মসজিদের আয় বাড়াতে গুদামটি ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়ার টাকা তিনি প্রতি মাসে কী করেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি ওই টাকা মসজিদে দিয়ে দেন। এর কোনো রসিদ আছে কি না, জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেননি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। খুব দ্রুতই খোঁজ নিয়ে এ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।