শনিবার , ৯ এপ্রিল ২০২২ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ঈশ্বরদী
  5. করোনাভাইরাস
  6. কৃষি
  7. ক্যাম্পাস
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. চাকরির খবর
  11. জাতীয়
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. তারুণ্য
  14. ধর্ম
  15. নির্বাচন

ঈশ্বরদীতে ২৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির প্রত্যাশা

প্রতিবেদক
বার্তা কক্ষ
এপ্রিল ৯, ২০২২ ১:১৮ অপরাহ্ণ
ঈশ্বরদীতে ২৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির প্রত্যাশা

মুকুল ধরার আগে ও পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ঈশ্বরদী উপজেলাতে লিচু গাছে প্রচুর পরিমাণে গুটি এসেছে। যদি অতিরিক্ত খরা ও ঝড়বৃষ্টি না হয়, তাহলে চলতি বছরে লিচুর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চৈত্রের শেষে মুকুল থেকে সবুজ রঙে লিচুর গুটি ধরা শুরু হয়েছে। চৈত্রের তপ্ত রোদে সবুজ পাতার মাঝে লিচুর গুটিতে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে।

এ বছর ঈশ্বরদী উপজেলায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার ৩৬০টি বাগানে লিচু চাষ হচ্ছে। যদি শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে ঈশ্বরদীতে ২৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করবেন কৃষকরা, ধারণা কৃষি বিভাগের।

গত বছরের চেয়ে এবার গাছে মুকুলের পরিমাণ অনেক বেশি। গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ কেউ বাগান বিক্রি করছেন। লিচুর পাইকাররা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে বাগান কিনে পরিচর্যাও করছেন ভালো ফলনের আশায়।

ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে। লিচু চাষিরা সময়মত সার, সেচ কীটনাশকসহ পরিচর্যা করছেন। মুকুল থেকে সপ্তাহ খানেকের ভেতর গুটি আসা শুরু হবে। কোনো কোনো গাছে গুটি এসেছেও। গত বছরের তুলনায় এ বছরে যেভাবে লিচুর মুকুল ধরেছে এতে আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা।

এখানকার কৃষি বিভাগ মনে করছে, আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে, এ বছর ঈশ্বরদীতে ২৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলায় মোট ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচু বাগান ১২ হাজার ৩৬০টি। বাগানগুলোতে গাছ রয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার। প্রতিটি গাছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার লিচু ধরে থাকে। এছাড়া লিচু আবাদ হয়ে থাকে এমন এলাকায় বসতবাড়ি সংলগ্ন ভিটায় ২ থেকে ৪টি করে লিচু গাছ তো রয়েছেই।

সরেজমিন ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়-পাকশী, সাঁহাপুর, সলিমপুর, দাশুড়িয়া, লক্ষ্মীকুন্ডাজুড়ে ইউনিয়নের রাস্তার পাশে মাঠের পর মাঠ জুড়েই লিচুর বাগান। তাছাড়া ওইসব ইউনিয়নে বাড়ির আঙিনা-উঠানে এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে একটি-দুটি লিচু গাছ নেই।

প্রচণ্ড গরমে যেন লিচুর গুটি ঝরে না পড়ে সেজন্য বাগানে স্প্রে দিতে অনেক কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঈশ্বরদী উপজেলাতে মোজাফফর (দেশি) বোম্বাই, চায়না-৩ জাতের লিচুর আবাদ হয়।

উপজেলার সাঁহাপুর ইউনিয়নে লিচু গাছের যত্ন ও পরিচর্যা করছিলেন লিচু চাষি মুনছুর আলম। তিনি জানান, গত বছর লিচু গাছে নতুন পাতা বেশি ছিল। মুকুল বেশ কম ধরেছিল, সে তুলনায় এ বছর অনেক মুকুল এসেছে। এখন যেন গুটি এসে ঝরে না যায় তাই গাছে কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক স্প্রে ও গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও লিচু বাগান মালিকরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচু পাকবে রোজার পর। এতে ভালো দামে লিচু বিক্রি হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের চর-রূপপুর গ্রামের পলাশ আহম্মেদ লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত কয়েক বছর ধরে। তিনি জানান, এ বছর তিনি আড়াই শতাধিক গাছে লিচুর আবাদ করেছেন। লিচু গাছে মুকুল আসার আগে ও পরে গাছের গোড়াতে তিনি শুধু গোবর সার দিয়েছেন। সে কারণে বাগানে কীটনাশক সার স্প্রে কম দরকার হয়েছে। রোগবালাই ছাড়াই তার বাগানে সঠিক সময়ে লিচু গুটি ধরেছে।

লিচু চাষি পলাশ আহম্মেদ আরও বলেন, লিচুর বাগান কিনতে ব্যবসায়ীরা আসেন দেশের বহু জেলা থেকে, তারাই মূলত: লিচু বাগানের ক্ষতিটা করে যায়। ঈশ্বরদীতে মাটির গুণাগুণ বেশি এবং ফসল উৎপাদনের কার্যক্ষমতা বেশি। পরিচর্যাটি যদি সঠিক নিয়মে করা যায়, লিচুর ফলন ভালো হবে। ঈশ্বরদীর লিচু পরিপূর্ণ পাকলে সুমিষ্ট হয়। বাগান কেনা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লিচুর স্বাদ বাড়াতে লিচু গাছের গোড়ায় লবণের পানি দিয়ে থাকেন। এটা মারাত্মকভাবে ক্ষতি! ফলে মাটি নষ্ট হয়ে ২/৩ বছর ফলন আসে না। কৃষি অধিদপ্তর কিন্তু এ বিষয়টি কৃষকদের অবগত করে সতর্ক করতে পারে। আবার অনেকে বলেন, গাছে নতুন পাতা এসেছে! মুকুল আসেনি। যদি এমনটা হয়, মুকুল না ধরে, লিচু গাছে নতুন পাতা আসতে শুরু করেছে, গাছে মুকুল আসার সময় কচিপাতার আগাগুলো ভেঙে দেওয়া যায়। তাহলে যথাসময় পাতা গঁজিয়ে মুকুল আসবে।

ফসলি জমিতে লিচুর বাগান করেছেন ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের লিচু চাষি সোহেল মালিথা। তিনি জানান, জমিতে লিচুর সঙ্গে তিন ফসল ঘরে তোলা বেশ সহজ। লিচু বাগানের জমিতে সবজি ও গম আবাদ করা যেতে পারে। এতে কৃষক লাভবান হবেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, উপজেলায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার ৩৬০টি বাগানে লিচু চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরে লিচু গাছে মুকুলের পরিমাণ অনেকটা বেশি।

কৃষিবিদ মিতা সরকার আরও জানান, মুকুল থেকে লিচুর গুটি যেন গাছ থেকে ঝরে না পড়ে সেজন্য আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি, কৃষকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ঈশ্বরদীর লিচুর খ্যাতি রয়েছে দেশব্যাপী। উপজেলায় এবার তিন হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ রয়েছে। আবহাওয়া লিচু চাষের অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে। তিনি বলেন, লিচু গাছের সংখ্যা ও গাছ প্রতি লিচুর ফলন অনুযায়ী আশা করা যায় এবার ঈশ্বরদীতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে।

সর্বশেষ - ঈশ্বরদী

আপনার জন্য নির্বাচিত
error: Content is protected !!