ঈশ্বরদীতে ১৯ হাজারের বেশি মানুষকে ফ্যামিলি কার্ডে টিসিবির পণ্য
নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে টিসিবির পণ্য ক্রয়ে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যে টিসিবির কার্ড বিতরণ শুরু করেছে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, আগামী ২০ মার্চ থেকে ঈশ্বরদী উপজেলায় ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম একযোগে (১ম পর্ব) শুরু হবে। উপজেলায় ১৯ হাজার ৩৬৯ জন মানুষ এ কার্ডের মাধ্যমে সুলভমূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। এ কার্ডের মাধ্যমে একজন গ্রাহক দু’কেজি চিনি, দু’লিটার সয়াবিন তেল ও দু’কেজি ডাল কিনতে পারবেন। টিসিবির পণ্যের মধ্যে তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৫৬ টাকা এবং চিনি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হবে।
টিসিবি’র তালিকা বলছে, ঈশ্বরদী পৌরসভার পশ্চিম টেংরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাঁড়ার আরামবাড়ীয়া বাজার, সাঁড়া ঝাউদিয়া চাঁদমারী মোড়, পাকশী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, রূপপুর বিবিসি বাজার, পাকশী বাজার, মুলাডুলি বাজার, পতিরাজপুর মোড়, বহরপুর মোড়, দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের সামনে, কালিকাপুর বাজার, মাড়মী বটতলা, ছলিমপুরের চরমিরকামারী শেখেরগাড়ী, জয়নগর বোড অফিস, ভাড়ইমারী বটতলা, সাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, সাহাপুর ক্লাব মন্ত্রীর মোড়, বাবুলচড়া উচ্চ বিদ্যালয়, লক্ষীকুন্ডার কৈকুন্ডা ফকির মার্কেট, দাদাপুর বাঁধ ও চরকুড়ুলিয়া স্কুল মাঠে পণ্য বিক্রির তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঈশ্বরদীর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ও ৭ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন তাঁদের অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। দম ফেলার ফুসরত তাঁদের নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করতে হবে, বিতরণ করতে হবে ফ্যামেলি কার্ড। তবে কয়েকজন কাউন্সিলার অভিযোগ করে বলেছেন, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বড় কাজ করা সম্ভব নয়।
পৌরসভার নারী কাউন্সিলার ফিরোজা বেগম বলেন, ফ্যামেলি কার্ড পৌর এলাকার হতদরিদ্র মানুষের জন্য। এটির মাধমে তারা সূলভমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে পারবে। গত পাঁচ দিন আগে তার ওয়ার্ডের জন্য ফ্যামিলি কার্ড তিনি হাতে পেয়েছেন। ছুটে গেছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে। খুঁজে খুঁজে বের করেছেন হতদরিদ্র মানুষকে। নামের তালিকা চূড়ান্ত হলেও কিছু ফ্যামিলি কার্ড এখনো বিতরণ করা বাকি আছে তার। তবে তা একদিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদী। এরকম মহান উদ্যোগের জন্য সময়ের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন কাউন্সিলার ফিরোজা।
সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, হতদ্ররিদ্র মানুষের মধ্যে সুলভমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন নির্দেশনা আসে আমাদের। সব প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন সময়ের অপেক্ষা। নির্দেশ এলে তাঁর ইউনিয়নে কার্ড বিতরণ করা হবে।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, ‘তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শেষ। কোনো হতদরিদ্র যাতে বাদ না পড়েন, সেভাবে তালিকা করা হয়।
টিসিবির ঈশ্বরদী অঞ্চলের প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে উপকারভোগীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। আগামী ২১ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম চলবে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ঈশ্বরদীতে প্রায় ১৯ হাজারেরও বেশি হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে টিসিবির পণ্যগুলো বিতরণ করা হবে। ফ্যামিলি কার্ড ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং জনপ্রতিনিধিরা বিতরণ করছেন।
টিসিবি পণ্য বিক্রির আগের প্রক্রিয়া বন্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগের প্রক্রিয়ায় সবার পণ্য নেওয়ার সুযোগ ছিল। এতে এক লোক বারবার পণ্য নিতে পারতেন। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় শুধু নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুযোগটা রাখা হয়েছে। কার্ডগুলো প্রতি নিম্ন আয়ের পরিবারের একজনকে দেওয়া হবে। দুটি ধাপে পণ্য বিক্রি করা হবে। প্রতিটি ধাপে একজন ফ্যামিলি কার্ডধারী একবার পণ্য কিনতে পারবেন।
পিএম ইমরুল কায়েস আরও বলেন, নতুন এ প্রক্রিয়ায় একজন ক্রেতা দুই কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল ও দুই কেজি তেল নিতে পারবেন। কার্ড অনুযায়ী প্রতিটি ট্রাকে মাল দেওয়া হবে। ডিলারদের অনিয়মের কোনো সুযোগ থাকবে না। কার্ড সংখ্যা নির্ধারিত। যদি কার্ডধারীদের বিক্রয়কেন্দ্রে না পাওয়া যায়, তাহলে কমিটি গরিব মানুষের মধ্যে পণ্য বিতরণ করতে পারবে। কোন ওয়ার্ডে কতটা কার্ড আছে, ওই ওয়ার্ডে কতটা ট্রাক লাগে, সে পরিমাণ দেওয়া হবে।