‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১৫ বছর পর স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন মনিরুল ইসলাম (৩৭) নামের এক ব্যক্তি।
রবিবার সকালে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বাঘহাছলা গ্রামের বালিয়া ডাঙা এলাকায় ফিরে আসেন তিনি।
মনিরুল ইসলাম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় আপন মামাতো দুই ভাই আব্দুল মতিন বিশ্বাস (৩৫) ও আমিরুল বিশ্বাস (৪০) জেল খেটেছেন। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ১৫ বছর পূর্বে ওই গ্রামের আহেদ আলীর ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩৭) তার আপন মামাতো দুই ভাই আব্দুল মতিন বিশ্বাস (৩৫) ও আমিরুল বিশ্বাসসহ (৪০) রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য রাজধানী ঢাকায় যান। প্রায় ৬ মাস কাজ করার পর মতিন ও আমিরুল বাড়িতে ফিরলেও ঢাকায় থেকে যান মনিরুল। সেখানেই মনিরুল বিয়ে করে ঘর-সংসার শুরু করেন। কিন্তু ঠিকমতো কাজ না করায় তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে তাড়িয়ে দেয়।
আরও জানা যায়, ঢাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে মনিরুল কুমিল্লায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেই সময় মনিরুলের পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে আপন মামাতো ভাই মতিন ও আমিরুলের ওপর নানাভাবে দোষ চাপাতে থাকেন।
এভাবে প্রায় ১০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে মনিরুলকে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে মতিন ও আমিরুলকে অভিযুক্ত করে ঈশ্বরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন মনিরুলের বাবা আহেদ আলী।
সেই সময় পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে নিখোঁজের কোনো ‘মোটিভ’ না পেয়ে মামলা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে তার পরিবার পাবনা আদালতে নিখোঁজের ঘটনা উল্লেখ করে মামলা করেন।
আদালতে হাজির হয়ে মতিন ও আমিরুল জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর তারা দুজনেই জামিনে মুক্তি পান।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করছে।
মতিনের ভাই জসিম উদ্দিন জানান, মনিরুল ঢাকা থেকে কুমিল্লায় গিয়ে আত্মগোপন করে সেখানেই আবার বিয়ে করে ঘর-সংসার শুরু করেন। সেখানে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান হয়। অথচ আমার দুই ভাইয়ের নামে নিখোঁজের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হলো।
অন্যায় না করেও মিথ্যা মামলা এবং জেল খাটার বিষয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।
মনিরুলের পরিবারের দাবি, গত ১৫ বছর মনিরুল কিছুটা স্মৃতিভ্রষ্ট ছিল। স্মৃতি ফিরে আসায় তিনি বাড়িতে ফিরেছেন।
তবে মনিরুলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ ছিল মনিরুল ইসলাম। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ-খবর না পাওয়ায় বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়ায়। দীর্ঘ সময় নানা নাটকীয়তা শেষে গতকাল রবিবার স্ত্রী ও ৩ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে মনিরুল।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) হাদিউল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, আদালত থেকে নির্দেশনা এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।