ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ৫৬টি ইটভাটা। এর মধ্যে দুটি ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র আছে। বাকিগুলো ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। খাসজমিতে তৈরি এসব অবৈধ ভাটার মালিকরা পদ্মা নদীর বুকে ১০টি রাস্তাও বানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ইউনিয়নে রয়েছে কয়েক হাজার একরের সরকারি খাসজমির নবীনগর চর, দাদাপুর চর, শাহপাড়ার চর, ডিগ্রির চর, চরমাদিরার চর ও শানিকদিয়াড় চর। এখানকার বেশির ভাগ ইটভাটার মালিকদের ইট প্রস্তুতের জন্য কিনতে হয় না মাটি। পদ্মা নদী ও চরের খাস এবং অন্যের ফসলি জমি থেকে বিনা বাধায় এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে আনা হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফিট চিমনির প্রতিটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে গাছ। গাছগুলোকে ভাটার জ্বালানি মুখে ফেলার উপযোগী করতে বসনো হয়েছে করাতকল। সেখানে কেটে গাছের টুকরাগুলোকে উপযোগী করা হচ্ছে।
কয়লার পরিবর্তে গাছ পোড়ানো হচ্ছে কেন—জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালিক জানান, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, থানা-ফাঁড়ি, নৌ পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদকে ম্যানেজ করতে অনেক টাকা খরচ হয়। সেই খরচ পোষাতে তাঁরা কয়লার পরিবর্তে গাছ পোড়ান। কারণ বাজারে কয়লার দাম বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিকরা জানান, মাঝেমধ্যে সাদা পোশাকে লোকজন এসে প্রশাসনের লোক পরিচয় দেন। ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন। টাকা নিয়ে চলে যান।
বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহপাড়া চরের ভাটা মালিক কামাল হোসেন জানান, প্রতিবছর পাবনা সুুগার মিলস মাড়াই মৌসুমে চর থেকে আখ নেওয়ার জন্য নদীতে রাস্তা করত। মিল এবার বন্ধ। তাই ভাটার মালিকরা চর থেকে মাটি আনার জন্য রাস্তা করেছে।
ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয় বলেন, ‘সব জায়গা ম্যানেজ করেই এবার ইটভাটা চলছে। পদ্মা নদী থেকে মাটি কাটার জন্য প্রশাসন সম্মতি দিয়েছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ফসল নষ্ট করে মাটি কাটা অপরাধ। তবে মালিক জমির মাটি বেচলে কৃষি বিভাগের কিছু করার থাকে না।
পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমুল হোসেনকে মুঠোফোনে কল করে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর কার্যালয় সূত্র জানায়, ভাটাগুলোর মধ্যে দুটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। অন্যগুলোর নেই।
ঈশ্বরদী উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ভাটায় পোড়ানো কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন কাটা পড়ছে হাজার বিভিন্ন প্রজাতের গাছ। এসব দেখে খুবই খারাপ লাগে। কিন্তু এগুলো দেখার দায়িত্ব জেলা বন কর্মকর্তার।
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, ‘ভাটার মালিকরা কোন প্রশাসনকে টাকা দিয়েছেন, তা জানি না। দু-এক দিনের মধ্যে অভিযান চালাব।
সূত্র : কালেরকণ্ঠ