ঈশ্বরদী উপজেলায় মটরশুঁটির বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদী উপজেলায় ৭৯ হেক্টর জমিতে জমিতে চাষ হয়েছে এ ফসল।
মুলাডুলি ইউনিয়নেই চলতি মৌসুমে ৫০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন কৃষকরা।
এ ইউনিয়নে শিম চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কৃষকরা এবার মটরশুঁটি চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। তাদের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
মুলাডুলি ইউনিয়নে গেলে সরেজমিনে মটরশুঁটি তুলতে দেখা যায় কৃষাণ-কৃষাণিদের।
মাঠে বসে গ্রামের নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও অবসরে এ কাজ করছেন। কথা হলে তারা জানায়, এক কেজি মটরশুঁটি ক্ষেত থেকে তুলে দিলে ১২ টাকা মেলে।
আধা বেলাতে ১৫-২০ কেজি ফসল তোলা সম্ভব। দুপুর পর্যন্ত কাজ করলে গড়ে দুই আড়াইশো টাকা মেলে।
সাধারণত কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহে মটরশুঁটির বীজ রোপণ করা হয়। জমির ফসলে ফুল না আসা পর্যন্ত ৩ বার সেচ দিতে হয়। ফুল আসার পর একবার সেচ দিতে হয়। মটরশুঁটি চাষে রোগবালাই কম হয় বলে একবার কীটনাশক দিলেই হয়। বীজ রোপণের ৮০ দিনের মাথায় ফসল তোলা হয়। ক্ষেতে ফুল আসার ১৫ দিন পর ফল আসে।
শীতকালীন বিভিন্ন সবজির ফলন ভালো হয় ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নে। এ সুনামের জন্য মুলাডুলির পাবনা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে উত্তরবঙ্গ এলাকার বৃহৎ সবজির আড়ৎ ও দৈনিক একটা বাজার গড়ে উঠেছে। শীত মৌসুমে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সবজির আড়ৎটি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে ওজন দরে। সবজি বিক্রি করে কমিশন পায় আড়ৎদাররা। এ মোকাম থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা পাইকার-ব্যবসায়ীরা ট্রাক বোঝায় করে সবজি নিয়ে যায়।
মুলাডুলির একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন আমিনুর রহমান বাবু (৪০)। পাশাপাশি কৃষিজমিতে চাষও করেন তিনি। কথা হলে তিনি বলেন, মুলাডুলি ইউনিয়নে মটরশুঁটি চাষে কারও কোনো আগ্রহ ছিল না। আমি বছর দুয়েক আগে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে মটরশুঁটির আবাদ শুরু করে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলি।
তিনি বলেন, আগে এখানকার কৃষকরা বছরের পর বছর ধরে শিম, ঢেঁড়স চাষ করতেন। একই জমিতে এক ফসল উৎপন্ন করলে জমির উর্বরতা কমে ফসল উৎপাদন কম হয়, এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে ১১ বিঘা জমিতে আমার মটরশুঁটি রয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৫০ মন মটরশুঁটির ফলন হয়। শুরুতে প্রতি মণ ৫ হাজার ২শ’ টাকা বিক্রি করেছি। বর্তমানে ২ হাজার ১ টাকা দরে বিক্রি করছি।
তিন সন্তানের জনক রবিউল ইসলাম বাবু (৩৮) পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। জমি বর্গা নিয়ে এ বছরে মটরশুঁটি চাষ করেছেন।
বাবু বলেন, ১ বিঘা জমিতে প্রথমবার মটরশুঁটি চাষ করে তেমন লাভ হয়নি। সেবার তেমন দাম ছিল না। এ বছরে দ্বিতীয়বার মটরশুঁটি আবাদ করে ভালো দাম মিলেছে। একবিঘা জমিতে মটরশুঁটি চাষ করতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। শুরুতেই ২০ হাজার টাকা মন বিক্রি করেছি।
ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে ক্ষেতে বসে মটরশুঁটি তুলছিলেন ষাটোর্ধ কৃষক কোরবান আলী ফকীর, তিনি জানান, পৈতৃক সম্পত্তি এটা। ৮ কাঠা জমিতে বছরের পর বছর সিম, ঢেঁড়স, ধান লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরবর্তীতে অল্প খরচে মটরশুঁটি চাষ করে দ্বিগুণ লাভ পেয়েছেন।
সরকারি কোন সহযোগীতা মেলে কি না? প্রশ্নের উত্তরে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে কোনোদিনই সহযোগিতা মেলেনি। তাছাড়া দরকারও হয় না। তবে অনেকেই পায় শুনেছি।
ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল, কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকার ঈশ্বরদী উপজেলায় মটরশুঁটি চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। চলতি মৌসুমে এখানে ৭৯ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটির আবাদ হয়েছে।
মিতা সরকার আরও বলেন, বছরের পর বছর একই জমিতে একই ফসল চাষ করার ফলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়, ফসলে রোগবালাইয় বেশি হয়। বিভিন্ন ধরনের ফসল যেমন মটরশুঁটি, খেসারি ইত্যাদি ফসল চাষ করলে জমির বিভিন্ন স্তর থেকে গাছ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে। ফলে একদিকে যেমন ফসল সঠিকভাবে বেড়ে উঠে, অন্যদিকে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা হয়। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়।
ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৫০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এখানে মটরশুঁটি চাষ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন। আগামী মৌসুমে আরও বেশি পরিমান জমিতে কৃষকরা মটরশুঁটি চাষ করবেন বলে জানা গেছে।