ঈশ্বরদীতে নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর নাঈমুল ইসলাম হৃদয় (২২) নামে এক ব্যবসায়ীর ১০ টুকরা মরদেহ উদ্ধারের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
জানা যায়, অপহরণ নয়, চাকরি দেওয়ার নামে নেওয়া ৮০ হাজার টাকা ফেরত না দেওয়ার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুলিশের হাতে আটক আসামি আবুল হাসনাত মো. ইসমাইল ওরফে হাসান (৩৮) এমন কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতিকুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেছেন
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পাবনা জেলা আদালতের মাধ্যমে জবানবন্দি রেকর্ড করার পর ওই আসামিকে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নিহত হৃদয়ের বাবা মজনু মোল্লা বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কু্ষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের দাশুড়িয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া একটি বাড়ির মেঝে থেকে ট্রাভেল ব্যাগের ভেতর ১০ টুকরো মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর তিনবটতলা এলাকা থেকে প্রকাশ্যে একটি মাইক্রোবাসে করে তাকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিল অপহৃত হৃদয়ের স্বজনরা।
নিহত ব্যবসায়ী ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে মজনু মোল্লার ছেলে। পাকশী রূপপুর তিনবটতলার পাশে তার একটি মোবাইলের দোকান ছিল।
রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপ-পরিদর্শক) সাব ইন্সপেক্টর আতিকুল ইসলাম আতিক এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে পাকশী রূপপুর তিনবটতলা থেকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় একদল দুর্বৃত্ত। এরকম অভিযোগ থানায় জানান হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে। ওইদিন বিকেলেই ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকে স্বজনদের কাছে ফোন আসে। হাসানকে ছাড়াতে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। সেই সূত্র ধরেই মোবাইল নাম্বার ট্যাকিং করে অপরাধীর লোকেশন জানার চেষ্টা করা হয়। পরে কৌশলে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার শর্তে নিদিষ্ট স্থানে আসার পর হাসানকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে মরদেহের সন্ধান মেলে।
পাবনা শহরের পৈলানপুর এলাকার মৃত আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে আটক আসামি হাসানের সঙ্গে কয়েকমাস আগে থেকে হৃদয়ের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। হাসান রূপপুরে একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। হৃদয় রূপপুর এলাকার মোবাইলের ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে হাসানের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো ভালো কোম্পানিতে চাকরি মিলিয়ে দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতিতে কয়েকমাস আগে ৮০ হাজার টাকা নেন হৃদয়। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও চাকরি কিংবা টাকা কিছুই ফেরত দিতে পারেননি হৃদয়।
এ কারণেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে হাসান। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জিদের বশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাকশী রূপপুর এলাকার একটি মেসে হৃদয়কে দেখা করতে বলেন হাসান। সেখানে হৃদয় আসলে জুসের মধ্যে চেতনানাশক ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়। পরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয় তাকে। ঠাণ্ডায় হৃদয়ের মরদেহ শক্ত হয়ে গেলে কোনো উপায় না দেখে পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হৃদয়ের শরীর ১০ টুকরো করার পর ট্রাভেল ব্যাগে ভরে রাখে। রাতে বের হয়ে কাঁচাবাড়ির ভাড়া বাসা খুঁজে হাসান। কু্ষ্টিয়া-নাটোর মহাসড়কের নওদাপাড়াতে মহাসড়কের পাশে চাঁদ আলীর বাড়িতে কাঁচা ঘর ভাড়া নেন হাসান। রাতে আবার মেসে ফিরে এসে মরদেহ ভরা ট্রাভেল ব্যাগটি নিয়ে অটোরিকশায় করে ওই বাড়িতে যান। সেখানে রাতে ভাড়া ঘরের মেঝে খুঁড়ে ট্রাভেল ব্যাগটি পুঁতে রাখে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) হৃদয়ের মোবাইল ফোন দিয়ে হাসান তার পরিবারের কাছে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। বিষয়টি হৃদয়ের পরিবার পুলিশকে জানালে ওই ফোন নাম্বারটি ট্যাকিং করে আসামি হাসানকে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ডেকে নিয়ে আসা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কু্ষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের উপজেলা দাশুড়িয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া একটি বাড়ির মেঝের মাটি খুঁড়ে ট্রাভেল ব্যাগের ভেতর ১০ টুকরো মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, হৃদয়ের টুকরো করা মরদেহ উদ্ধার শেষে সুরতাহাল করা হয়। পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর মরদেহটি পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) পাবনা জেলা আমলী আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করার পর ওই আসামিকে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।