সেই ব্রিট্রিশ আমলের কথা। একজন বাঙালি রেলওয়ে কর্মকর্তা রেলওয়ে কর্মচারীদের বলেছিলেন, ‘তোমরা একটা কিছু উপহার চাও, তোমাদের তাই দেওয়া হবে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সদর দফতরের কর্মচারীরা নিজ কর্মস্থলে যাতায়াতের প্রয়োজনে চেয়েছিল একটি ট্রেন।
প্রতিদিন সকাল-বিকেল ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ইয়ার্ড থেকে যাত্রীবাহী ‘পাইলট’ নামে টিকিট ছাড়াই একজোড়া ট্রেন চলাচল করতো।
১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার কোনো কারণ ছাড়াই ‘পাইলট’ ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপর আর এইরুটে কোনো ট্রেনই চলাচল করেনি। দীর্ঘ আড়াই যুগ বা ৩০ বছর পর ঈশ্বরদী-পাকশী রেলরুটে আবার ট্রেন চলবে।
তবে কাজ শেষ হলেও কবে কখন উদ্বোধন হবে, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিম জানান, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কতৃপক্ষ পুরোনো সেই রেললাইন সরিয়ে ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার আধুনিক রেলপথ নির্মাণ করেছে। ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই পথ। ঈশ্বরদী পাকশী পর্যন্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল সহজে আনা নেওয়া করার জন্য ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২২ দশমিক ২ কিলোমিটার মূল লাইন এবং ৪ দশমিক কিলোমিটার লুপ লাইন,১৩ টি লেবেল ক্রসিং গেট, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র সংলগ্ন একটি ‘বি’ শ্রেণির স্টেশন, একটি প্লাটফর্ম এবং সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ শেষে ট্রায়াল ট্রেন চালানো হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ রেলপথ পরিদর্শক পরিদর্শন করে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
আড়াই যুগ পর ঈশ্বরদী-পাকশীর এই রেলরুটে আবার ট্রেন চলবে। অপেক্ষায় পুরো এলাকার মানুষ…
রেলওয়ে প্রকৌশলী আব্দুর রহিম আরও বলেন, রেলবান্ধব সরকারের আমলে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রেলপথের উন্নয়ন,একটি দৃশ্যমান উন্নয়ন। পুরোনো রেলরুটটি যেন ফিরে পেয়েছে তার হারানো ঐতিহ্য।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম জানান,দেশের অত্যতম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে মালামাল পরিবহন করার জন্য ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরোনো রেললাইন সরিয়ে তৈরি হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন রেললাইন। ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। যেকোনো সময়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এখনও বি শ্রেণির প্লার্টফর্মের নামকরণ করা হয়নি। আর উদ্বোধনের পর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় রূপপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ যুক্ত হবে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কে।
রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবর জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে ঈশ্বরদী স্টেশন হয়ে সিবিলহাট ওপর দিয়ে পাকশী পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কাঁচামাল চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দরে খালাস করে মিটার গেজ ট্রেনের মাধ্যমে সহজে আসতে পারবে।
জানা যায়, ১৯১৫ সালে রেলসেতু পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের পর সাঁড়াঘাটের বরফকল থেকে বরফ পরিবহনের জন্য ব্রিটিশ রেল কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপন করেন। রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বিনা পয়সার ট্রেন চলাচল করতো। টিকিট কাটার প্রয়োজন ছিল না বলে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে স্থানীয় সাধারণ মানুষও বিনা পয়সায় চলাচল করতেন এই পাইলট ট্রেনে।