পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেখ ওমর ফারুককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। অভিনেত্রী পরীমণি, মৌ ও পিয়াসার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার তত্ত্বাবধান করছিলেন তিনি। সিআইডির ঢাকা মহানগর উত্তরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনি ছাড়া আরও এক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তিনি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির এপিবিএন ৬-এর অধিনায়ক মো. আবদুর রহিম। পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা তিনি।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে তাদের অবসর-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওমর ফারুক ও রহিম দু’জনই বিসিএস ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মডেলদের গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মামলার অগ্রগতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন ওমর ফারুক। তার এ ধরনের বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর নীতিনির্ধারক এবং সরকারের শীর্ষ মহল ভালোভাবে নেয়নি। এ ছাড়া তিনি বিএনপি সমর্থক কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের জেলা নেত্রকোনার এসপির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ওমর ফারুক। বিএনপি আমলে প্রাইজ পোস্টিংও পেয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করে পুলিশে আসা এই কর্মকর্তা। বাবরের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন বলে বিশ্বাস করতেন অনেকে।
ওমর ফারুকের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট। ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। এরই মধ্যে প্রায় ২৯ বছর চাকরি করেছেন তিনি। অনেক দিন ধরেই ওমর ফারুককে অবসরে পাঠানোর ব্যাপারে গুঞ্জন ছিল। মডেলদের ঘটনায় তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চাকরি থেকে অবসরের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করে।
অভিনেত্রী পরীমণি, মৌ ও পিয়াসা
মডেলদের গ্রেপ্তারের পর সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওমর ফারুক বলেছিলেন, ‘পরীমণি, পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তারা ব্ল্যাকমেইলিংসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে। নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না। যেসব নাম পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে যারা এসব অপরাধে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘কেন কী কারণে অবসরে পাঠানো হলো, এটা আমার জানা নেই। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অফিসে বসেই অবসরে পাঠানোর কথা জানতে পারি। এর পরই অফিস থেকে সরাসরি বাসায় চলে আসি। ২৫ বছর পূর্ণ হলে যে কাউকে সরকার অবসরে পাঠাতে পারে। সে জন্য কোনো কারণ দেখানোর প্রয়োজন নেই সরকারের। কোনো অভিযোগের ব্যাপারে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো আরেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রহিমও বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে পুলিশ ঢোকা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশ কর্মকর্তা রহিম ও কোহিনুর মেয়েদের হলে প্রবেশ করেছিলেন। ওই সময় পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার ছিলেন রহিম আর ডিবির এসি ছিলেন কোহিনুর। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে নানা উদ্যোগের পর রহিম ও কোহিনুরের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি তৎকালীন প্রশাসন। রহিম জোট সরকারের আমলে কপবাজারের পুলিশ সুপার, ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (নর্থ) ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বিসিএস ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অনেকে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হলেও রহিমের পদোন্নতি হয়নি।
জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ধনঞ্জয় দাসের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন।
সূত্র : সমকাল