ঈশ্বরদীতে পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সোমবার উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া ও আরামবাড়িয়া, সলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর ও পাকশীতে সরেজমিন দুর্ভোগের এ চিত্র দেখা যায়।
এলাকাবাসী জানান, কয়েক দিন আগে পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও একটি স্লুইসগেট বিকল থাকায় আকস্মিক বন্যায় কয়েক হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে যায়। বক্তারপুর গ্রামের একটি পাকা রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙে প্লাবিত হয় মাঠের পর মাঠ। এক দিনের ব্যবধানে রোববার থেকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও গ্রামবাসী পড়েছে নানা দুর্ভোগে। তবে আশপাশে বন্যা হলেও এবার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। সর্বশেষ গতকাল পাকশীতে পানির প্রবাহ ১৩ দশমিক ৮৪ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪১ মিটার নিচে।
জানা যায়, উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের দশভাগি, হেটেগাড়া ও টাকিমারা বিলের পানি রাস্তার অপর প্রান্তের মাঠে প্রবেশ করলে আকস্মিক বন্যায় এসব এলাকার প্রায় তিন হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে যায়। স্থানীয় আমিরুল ইসলাম জানান, রাস্তা ভেঙে উপজেলা সদরের সঙ্গে এসব গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ধান, মুখিকচু, ওলকচু, চাল কুমড়া, পটোলসহ শীতকালীন এবং গ্রীষ্ফ্মকালীন বিভিন্ন ফসল ও সবজির ক্ষেত এখনও পানির নিচে রয়েছে। রোববার থেকে পানি কমতে শুরু করলেও জমির ফসল ছাপিয়ে লিচু, মেহগনি ও আম গাছের মাঝামাঝি পর্যন্ত নিমজ্জিত হয়েছে। নারী কৃষক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, স্লুইসগেটটি সচল থাকলে এই বিলের পানি এভাবে লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারত না।
সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া স্কুলপাড়া গ্রামের প্রায় ৭০ বছর বয়সী নারী রোকেয়া বেগম। তিনি পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা। এর আগে দু’বার তিনি নদীভাঙনের কবলে পড়ে হারিয়েছেন ভিটেমাটি। নদীর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, নদীর ওইখানে এখন পানির যে স্রোত, সেখানেই ছিল তার বাড়ি। কয়েক দিন হলো পানি কমায় তার কষ্ট আরও বেড়েছে। গাছগাছালি ও ফসল সবই নষ্ট হয়ে গেছে। ভোটার আইডি কার্ডে তার বয়স ৬৫। বারবার চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের আবেদন করেও তিনি তা পাননি।
পাকশী পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পার্শ্ববর্তী চরে এবং উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের নদী সিকস্তি এলাকায় বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় আড়াই হাজার একর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর এসব ফসলের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। সব পচে পানির সঙ্গে মিশে যাবে।
কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, পাঁচ বিঘা জমির সব আবাদই এবার শেষ হয়ে গেছে। বক্তারপুর গ্রামের মা-মনি কৃষি খামারের মালিক শাজাহান আলী পেঁপে বাদশা বলেন, পানি কমতে শুরু করেছে, তবে আমার খামারের যা ক্ষতি তা এরই মধ্যে হয়ে গেছে।
সাঁড়া ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে এবং লক্ষ্মীকুণ্ডা ও সাহাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানি নেমে গেলেও বাড়ির আঙিনা এখনও কর্দমাক্ত থাকায় স্বাভাবিক চলাফেরা করার পরিবেশ এখনও ফেরেনি। বিলকেদার গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, পানি নেমে যাওয়া জমিতে এখনও নতুন করে আবাদের কোনো অবস্থা নেই।
সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পরও কিছু কিছু এলাকার মানুষ এখনও দুর্ভোগে আছে। এ পরিস্থিতি উন্নতি হতে আরও কিছু দিন লাগবে।
পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা একদিনও অতিক্রম করেনি। পানির প্রবাহ এখন ক্রমেই কমছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করে মানুষের দুর্ভোগ কমানোর চেষ্ট করব।
সূত্র : সমকাল