ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় অবস্থিত ‘পাবনা সুগার মিল’টি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আখ মাড়াই শুরুর উদ্যোগ না নিয়ে উলটো ৫৮৯ শ্রমিক-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। মিলের আখ মাড়াই কার্যক্রম ৯ মাস ধরে বন্ধ আছে।
পাবনা সুগার মিলের একাধিক সূত্র জানায়, এই মিলে ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এই মিলে সব মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে মাড়াই কার্যক্রম স্থগিতের ৯ মাসে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের আওতাধীন মিল কারখানায় বদলি করা হয়েছে ৫৮৯ জনকে।
এর মধ্যে কর্মকর্তা রয়েছেন ২৩ জন, স্থায়ী কর্মচারী ১৭১ জন, মৌসুমি কর্মচারী ৯৯ জন, শ্রমিক ১৫১ জন, মৌসুমি শ্রমিক ১২০ জন, সিকিউরিটি (আউটসোর্সিং) ২৩ জন ও চুক্তিভিত্তিক সুইপার রয়েছে ৩ জন। এই মৌসুমের মিলটির উৎপাদিত চিনি গুদামে মজুত নেই। শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন বাকি রয়েছে জুন, জুলাই ও আগস্ট এই ৩ মাসের।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ ডিসেম্বর লোকসান কমিয়ে আনার জন্য ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে পাবনা সুগার মিলে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য চিঠি পাঠায়। ১৫টি চিনি মিলের মধ্যে মোট ৬টি মিলের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাবনা সুগার মিলের সিবিএ সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহীন বলেন, সংস্কার করে মিলটি চালু করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আদৌ চালু হবে কি-না, সে ব্যাপারেও কিছু জানা যায়নি। শ্রমিক-কর্মচারীদের বদলি করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এর মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বাকিদেরও বদলি করা হবে। তবে তিনি মিলটি সংস্কার করে পুনরায় চালু করার দাবি জানান তিনি।
পাবনা সুগার মিল আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী ডিলু বলেন, মিলটিকে কেন্দ্র করে শত শত কৃষক আখ চাষে জড়িয়ে পড়েন। মিলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েন। তিনি মিলটির মাড়াই কার্যক্রম চালুর দাবি জানান। জানতে চাইলে পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফ উদ্দিন বৃহস্পতিবার জানান, শ্রমিক-কর্মচারীর তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দেশের ৬টি মিলের মধ্যে পাবনা সুগার মিলে ২০২০-২০২১ মাড়াই মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। পাবনা সুগার মিলটি আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিতের নয় মাস অতিবাহিত হতে চলল। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নে ৬০ একর জমির ওপর পাবনা সুগার মিলটি স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে মিলটি পরীক্ষামূলকভাবে আখমাড়াই শুরু হয়। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে মিলটি বাণিজ্যিকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু করে। মিলটি চালুর পর থেকেই উৎপাদন ঘাটতি ও লোকসান শুরু হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত মিলটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।