বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে ঢাকাগামী আন্ত নগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠলে ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম তাদের জরিমানা করেন। এ ঘটনায় শুক্রবার ( ৭ মে ) শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সময় বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী তিনজন রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানান বলে অভিযোগ করেন ওই টিটিই। তবে টিটিইর বিরুদ্ধে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ করেছেন ভ্রমণকারী ওই তিন ব্যক্তি।
এদিকে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীরা মন্ত্রীর আত্মীয় না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি আজ শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নয়। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো আত্মীয় জড়িত নয়। রেল কর্মকর্তারা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। ’
ওই ট্রেনে বিনা টিকেটে ভ্রমণকারী তিন ব্যক্তি হলেন―ইমরুল কায়েস প্রান্ত, হোসেন ও ওমর। হোসেন ও ওমর সম্পর্কে ইমরুলের মামা। তাদের মধ্যে টিটিইর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ইমরুল। তিনি রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মী আক্তারের বোনের (নিপা) ছেলে। আর হোসেন ও ওমর রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মীর আপন মামাতো ভাই। ইমরুলের বাড়িতে ঈদ করতে আসেন তারা। ঈশ্বরদী শহরের নূর মহল্লায় তাদের বাড়ি। রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী ইমরুলকে সন্তানের মতো দেখেন। ভুক্তভোগী হোসেন তাদের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারা তিনজনই রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আক্তার মনির নিকটাত্মীয়।বাড়ি ঈশ্বরদীর শহরের নুর মহল্লায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকায় যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট নিতে বুকিং অফিসে যাই। সেখানে টিকিট না পেয়ে বিষয়টি আপুকে (শাম্মী) জানাই। আমাদের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেসের তিনটি টিকিট দিতে আপু দায়িত্বরত গার্ড শরিফুল ইসলামকে মুঠোফোনে বলেন। এরপর আমরা ট্রেনের একটি বগিতে উঠি। কিছুক্ষণ পরই শফিকুল ইসলাম এসে আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। ট্রেন থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দিতে চান। ’
অভিযোগকারী যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্ত বলেন, ‘আমি ঢাকাতে একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করি। ছুটি শেষ হওয়ায় ঢাকাতে আমাকে আসতেই হবে। টিকিট না পেয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম। টিটিইকে দেখেই আমি টিকিট চেয়েছি। টিটিই টাকা নিয়ে টিকেট লাগবে না বলে জানান। কিন্তু আমি টিকিট চাওয়ায় তিনি অশালীন আচরণ করেন। তার ব্যবহারে অসন্তোষ হয়ে বিষয়টি রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখন বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আমাদেরকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে জড়িয়ে নানা রকম মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ’
স্টেশনের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নূর ই আলম মুঠোফোনে বলেন, টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের মুঠোফোনে জানান, তিনজন যাত্রী বিনা টিকিটে ‘ক’ বগির এসি কোচের ১৫-১৭ সিটে বসে আছেন। তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিচ্ছেন। তখন টিটিইকে তাদের তিনজনকে শোভন চেয়ারে স্বল্প মূল্যে টিকিট দিতে বলা হয়।
তবে টিটিই শফিকুল ইসলামের বক্তব্য জানতে শনিবার দুপুর থেকে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কয়েকবার কল দেওয়ার পর একজন নারী রিসিভ করে ‘এটা টিটিই শফিকুলের নম্বর নয়’ জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে তার বাসা টিটিই হাউজে (রানিং স্টাফ রুম) গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে শুক্রবার টিটিই শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি ওই দিন যাত্রীর সঙ্গে কোনোরূপ অশালীন আচরণ করেননি। লাথি দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিতেও চাননি। তিনি শুধু রেলওয়ের নিয়ম মেনে ভাড়া আদায় করেছেন।
পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) মো. নাসির উদ্দিন জানান, ওই তিন যাত্রী টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। টিটিই নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলে অভিযোগকারীরা মনে করছেন। শফিকুলের বিরুদ্ধে তিন মাস আগেও একবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তিনি মানসিক হীনম্মন্যতায় ভুগছেন।
এদিকে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়াসহ জরিমানা আদায় ও টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটিতে পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন :