ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রথমবারের মত রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরো (হাইব্রিড) এসএল -8-H ধানের চারা রোপণের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বেদুনদিয়া কৃষক রাহাত আলী মালিথা ও শহিদুল ইসলামের ২০ বিঘা জমিতে চারা রোপণের মাধ্যমে মাঠ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দূরত্ব এবং গভীরতায় চারা রোপণ করা যাচ্ছে। এ পদ্ধতিতে নিখুঁতভাবে চারা রোপণ করা হয়। এতে ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। এই মেশিনের মাধ্যমে চারটি সারিতে ধানের চারা রোপণ করা যায়। বীজতলা তৈরি করার জন্য আলাদা জমির দরকার হয় না। যেখানে সেখানে রেখে প্লাস্টিকের ট্রে-তে বীজতলা তৈরি সম্ভব। মাত্র ৩০ দিন বয়সী ধান গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। রাইস প্লান্টারের মাধ্যমে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পেট্রোল লাগবে মাত্র আধা লিটার। আর যে যন্ত্র চালাবে সব মিলিয়ে তার মজুরি মাত্র ৫শ টাকা। এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করার সময় কৃষকের সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এতে করে কৃষকের ধান আবাদে খরচ কমে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঈশ্বরদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) পি এম ইমরুল কায়েসের সভাপতিত্বে ঈশ্বরদী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মুন্নাফের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন-কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মিজান-উর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা. মাহমুদা মোত্তমাইন্না, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মাহমুদুল আলম খাঁন, উপ-সহকারী কর্মকর্তা আলিউজ্জামান প্রমুখ।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হচ্ছে
প্রদর্শনীতে আসা কৃষক রাহাত আলী মালিথা জানান, যান্ত্রিকীকরণ পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করার কোনো ধারণা ছিল না। ঈশ্বরদী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ও সহায়তায় আমি এ বছর প্রথমবারের মত ২০ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করছি। বীজতলায় যে ধানের চারা দেওয়া হয়, চারা তোলার সময় ধান গাছের চারায় আঘাত লাগে। ওই চারাগাছ কিছু নষ্ট হয় সব বাঁচে না, এতে ফলনও কম হয়। মেশিনের সাহায্যে একটি চারা নষ্ট হয় না, রাইস প্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে চারা লাগানোর ফলে মেশিনের সাহায্যে গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার করা যাবে।
কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, রাইস প্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে মাত্র ৪৫ মিনিটে এক বিঘা জমিতে চারা রোপণ করা সম্ভব। সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে এক বিঘা জমিতে ধান গাছের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে ৪/৫ জন শ্রমিকের দরকার হতো। কৃষকের মজুরি গুনতে হতো বেশি, আবার সময়ও বেশি লাগতো। সেখানে স্বল্প সময়ে অল্প খরচে এই পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে কম খরচে ধানের চারা রোপণ করা সম্ভব।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, শ্রমিক সংকট, মজুরি বেশি ও অতিরিক্ত খরচের কারণে ধান আবাদে কৃষকরা লাভবান হতে পারছে না। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষি সেক্টর যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকার কৃষকদের আর্থিকভাবে সহায়তা করছেন যেন দেশে খাদ্যের ঘাটতি না হয়।
কৃষিবিদ মিতা সরকার আরও জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ঈশ্বরদী উপজেলায় এ বছর ৫০ একর জমিতে বোরো ধানের সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীতে রাইস প্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হলো। এই পদ্ধতিতে কৃষকদের যান্ত্রিকীকরণে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যেই রাইস প্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হলো। কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা সহজ হবে। অল্প সময়ে বেশি জমিতে কম ব্যয়ে অধিক ফলনে কৃষকরা লাভবান হবেন।